দোয়ারাবাজার উপজেলার বাংলাবাজার ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাঁশতলা চৌধুরী পাড়া শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয় বর্তমানে চরম দুরবস্থার মধ্যে রয়েছে। বিদ্যালয়ে বর্তমানে ৩১৮ জন শিক্ষার্থী থাকলেও শিক্ষক আছেন মাত্র ৩ জন। প্রধান শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষকসহ ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান, আইসিটি, ভিপিএড, চারু ও কারুকলা বিষয়ের শিক্ষক এবং লাইব্রেরিয়ান নেই। প্রতিষ্ঠানে ১৩টি পদের মধ্যে ৯টি পদ শূন্য। সাময়িক বরখাস্ত রয়েছেন সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ে শিক্ষক। খণ্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে কোনোভাবে পাঠদান পরিচালনা করা হচ্ছে।
অবকাঠামোগত সংকট শিক্ষক সংকটের পাশাপাশি বিদ্যালয়টিতে রয়েছে ভবন সংকটও। বিদ্যালয়ে রয়েছে ৫ কক্ষবিশিষ্ট একটি দ্বিতল ভবন এবং ৫ কক্ষবিশিষ্ট টিনের জরাজীর্ণ ঘর। টিনের ঘরে মরিচা পড়ে ফুটো হয়ে যাওয়ায় সামান্য বৃষ্টি হলেই পানি পড়ে, ফলে শিক্ষার্থীদের পাঠদান ব্যাহত হয়। শ্রেণিকক্ষের বৈদ্যুতিক পাখাগুলোও খুলে রাখা হয়েছে, কারণ টিনের ছাদে পানি পড়ে বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অভিভাবকদের মতে, ভবন ও শিক্ষক সংকটের কারণে শিক্ষার্থীরা কাঙ্ক্ষিত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
প্রশাসনিক সংকট ও দুর্নীতির অভিযোগ বিদ্যালয়ের শিক্ষক সংকট ও অবকাঠামোগত দুরবস্থার পেছনে প্রশাসনিক অব্যবস্থাপনার অভিযোগও উঠেছে। বিদ্যালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ জসিম আহমেদ চৌধুরী ২০১০ সাল থেকে দায়িত্ব পালন করছিলেন। চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি নাশকতার মামলায় গ্রেপ্তার হলে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। বর্তমানে ধর্মীয় বিষয়ের শিক্ষক মো. হযরত আলী ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, জসিম আহমেদ চৌধুরী বিদ্যালয়ের নামে বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যবহার করেছেন। বিদ্যালয়ের উন্নয়নে কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে তিনি পাথর উত্তোলনসহ বিভিন্ন অনিয়ম করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী। তবে এসব বিষয়ে কোনো তদন্ত এখনো সম্পন্ন হয়নি।
শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী মাহমুদা আক্তার সিমু বলেন, “আমাদের শ্রেণিকক্ষের অবস্থা খুবই খারাপ। সামান্য বৃষ্টি হলেই মেঝে কাদা হয়ে যায়। ভালো পরিবেশে পড়াশোনার জন্য নতুন ভবন প্রয়োজন।”
অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী রুমা আক্তার বলেন, “স্কুলে মেয়েদের জন্য কোনো কমন রুম নেই। শ্রেণিকক্ষগুলোর অবস্থা নাজুক। সরকারের কাছে আমাদের অনুরোধ, আমাদের স্কুলের জন্য একটি ভালো ভবন তৈরি করে দেওয়া হোক।”
বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মন্তব্য বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. হযরত আলী বলেন, “আমাদের শিক্ষক সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। প্রধান শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষকসহ বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষক নেই। বর্তমানে তিনজন খণ্ডকালীন শিক্ষক নিয়ে পাঠদান চালানো হচ্ছে, কিন্তু এতে শিক্ষার্থীদের কাঙ্ক্ষিত শিক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না।”
তিনি আরও বলেন, “শিক্ষার্থী বাড়ানোর জন্য অভিভাবকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিদ্যালয়ে ভর্তি করানো হয়, কিন্তু কয়েক মাস পর অনেক শিক্ষার্থী অন্যত্র চলে যায়। মূলত অবকাঠামোগত দুর্বলতার কারণেই শিক্ষার্থীদের মধ্যে এ অনীহা দেখা যায়।”
বিদ্যালয়ের ভবন সমস্যা নিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের অন্তত ১৫টি নতুন কক্ষের প্রয়োজন, যার মধ্যে শ্রেণিকক্ষ, প্রধান শিক্ষকের অফিস, সহকারী শিক্ষকদের অফিস, লাইব্রেরি কক্ষ, কম্পিউটার ল্যাব এবং মিলনায়তন অন্তর্ভুক্ত। আমরা এনটিআরসিএ’র কাছে শিক্ষক নিয়োগের আবেদন করেছি, তবে কবে শিক্ষক পাওয়া যাবে, তা এখনো অনিশ্চিত।
নিজস্ব প্রতিবেদক 









