সুনামগঞ্জের হাওরগুলোতে বোরো ফসল আগাম বন্যার হাত থেকে রক্ষার জন্য সরকার প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দিলেও, ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণে ধীরগতির অভিযোগ উঠেছে। ২০১৭ সালে হাওরে অকাল বন্যার পর সরকার কাবিটা নীতিমালা-২০১৭ প্রণয়ন করে, যেখানে ঠিকাদারি পদ্ধতি বাতিল করে কৃষকদের সমন্বয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) গঠনের মাধ্যমে বাঁধ নির্মাণের নিয়ম করা হয়। তবে, নিয়ম অনুসারে ১৫ ডিসেম্বর কাজ শুরু হয়ে ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও, এখনো অনেক বাঁধের কাজ শেষ হয়নি।
স্থানীয় এলাকাবাসীর মতে, বেশিরভাগ বাঁধে মাত্র ৫০-৬০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। অন্যদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) দাবি করছে, শনিবার পর্যন্ত ৮৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ হবে। তবে, প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) সদস্যরা বলছেন, দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ এখনো পাননি, যার ফলে অনেকেই ঋণ নিয়ে বা ধারদেনা করে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, জেলার ১২টি উপজেলার ৫৩টি হাওরে ৬৮৬টি প্রকল্পের মাধ্যমে বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। এর জন্য ১২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তবে, শুরুতে মাটির সংকটের কারণে কাজে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে বলে জানিয়েছে পাউবো।
সুনামগঞ্জে নাগরিক সংগঠন ‘জনউদ্যোগ’ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেছেন, বাঁধ নির্মাণে পরিকল্পনা, বাস্তবায়ন ও তদারকিতে দুর্বলতা রয়েছে। অধ্যাপক পরিমল কান্তি দে বলেন, “আমরা ফসলরক্ষা বাঁধের কাজে শতভাগ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা চাই। কিন্তু বাস্তবে তা দেখা যায় না। প্রতি বছর একই অভিযোগ ওঠে, কিন্তু স্থায়ী সমাধান হয় না।”
হাওর বাঁচাও আন্দোলনের জেলা সভাপতি ইয়াকুব বখত বলেন, “২০১৭ সাল থেকে আমরা অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলছি, কিন্তু কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আসছে না। অনেক বাঁধের কাজ এখনো শেষ হয়নি, যা বোরো ফসলের জন্য ঝুঁকির কারণ হতে পারে।”
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন হাওলাদার বলেন, “৮৫ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। কিছু স্থানে মাটির অভাব থাকলেও নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কাজ সম্পন্ন হবে। দ্বিতীয় কিস্তির টাকা চলতি সপ্তাহের মধ্যেই দেওয়া হবে, এবং দ্রুত তৃতীয় কিস্তির অর্থ ছাড়েরও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ সময়মতো শেষ না হলে কৃষকদের কষ্টের ফসল আগাম বন্যায় ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। তাই সংশ্লিষ্টদের দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
কালনী ভিউ ডেস্ক : 









