লন্ডন ০৭:০৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নিয়ম বহির্ভূত বদলিতে সুনামগঞ্জে প্রাথমিক শিক্ষকরা ক্ষুব্ধ

‘নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে গেল কিছুদিনে অফলাইনে সারাদেশে চার’শ—এর মত প্রাথমিক শিক্ষক বদলি হয়েছেন। এসব বদলি নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রাথমিক শিক্ষকরা। অধিদপ্তরের নীচের পর্যায়ের কর্মকর্তারাও রীতিমত অতিষ্ঠ।

অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, স্বচ্ছতা ও অধিদপ্তরে কাজের চাপ এড়ানোর জন্য অনলাইন বদলি’র নিয়ম কার্যকর করা হয়েছিল। এই পদ্ধতি চালুর জন্য কোটি কোটি টাকা খরচ হয়েছে। স্থানে স্থানে গিয়ে লাখ লাখ টাকা খরচ করে প্রশিক্ষণও দেওয়া হচ্ছে। অথচ গেল কিছুদিনে অফলাইনে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকের চারশ শূন্যপদে বদলির চিঠি ও ফাইল তৈরি করতে হয়েছে তাদের। এটি স্ববিরোধী কাজ। অনেকে পদস্থদের কাছে গিয়ে, কর্মক্ষেত্র বদলেরও জন্য আবদার করছেন বলে একাধিক দায়িত্বশীলরা জানিয়েছেন।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পলিসি এণ্ড অপারেশন বিভাগের একজন কর্মকর্তা বললেন, ‘ডিজি মহোদয় ক্ষমতাবলে বিশেষ বিবেচনায় বদলি করতে পারেন। আমরা সেই ফাইল তৈরি করি। দুই—তিন দিন হয় অনলাইনে বদলির নির্দেশনা দেবার জন্য কথা ওঠেছে। আমরা বলেছি, ভালো ভালো জায়গায় শূন্যপদে অফলাইনে বদলি হয়েছে শত শত শিক্ষক। এখন অনলাইনে বদলির নির্দেশ হাস্যকর হবে।’

এই কর্মকর্তা জানান, তবুও জানুয়ারিতে অনলাইনে বদলি’র নির্দেশনা দেওয়ার কাজ করতে বলা হয়েছে।
সুনামগঞ্জ শহর ও শহরতলির সবকয়টি শূন্যপদে গেল কয়েকদিনে অফলাইনে বদলি করা হয়েছে। অথচ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নীতিমালায় রয়েছে, কেবল জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত অনলাইনে বদলি’র আবেদন করা যাবে এবং সফটওয়ারের মাধ্যমেই বদলি কার্যক্রম সম্পন্ন হবে। কিন্তু সুনামগঞ্জ শহর ও শহরতলির বিদ্যালয়গুলোর শূন্যপদের বদলির ক্ষেত্রে এই আদেশ উপেক্ষিত হয়েছে।

জানা যায়, সুনামগঞ্জ শহর ও শহরতলির প্রায় চারশ শিক্ষক—শিক্ষিকা শহর থেকে প্রত্যন্ত এলাকায় গিয়ে পাঠদান করান। এমনও শিক্ষক—শিক্ষিকা আছেন, যাদের চাকুরির বয়সসীমা শেষ পর্যায়ে। শেষ বয়সে সুবিধাজনক এলাকায় চাকুরি করার জন্য বার বার কর্তৃপক্ষের কাছে ধরণা দিচ্ছেন এরা। কিন্তু কোন ব্যবস্থা হচ্ছে না।

সম্প্রতি সুনামগঞ্জ পৌর এলাকার কালীবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে, ষোলঘর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তিনটি পদ, হোসেন বখ্ত—ফরিদা বখ্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বড়পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মল্লিকপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শহরতলির হালুয়ারগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ইব্রাহিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বুড়িস্থল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকের পদ শূন্য হয়। এই দশটি শূন্যপদের নয়টি পদেই শিক্ষকরা আবেদনেরই সুযোগ পান নি। সর্বশেষ মল্লিকপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের শূন্যপদে অফলাইনে বদলি হয়ে মঙ্গলবার যোগদান করেছেন একজন প্রধান শিক্ষক। অন্যরাও বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় তড়িগড়ি করে অফিসে এসে যোগদান প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছেন।
ক্ষুব্ধ শিক্ষকরা এই বৈষম্যের প্রতিকার চেয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার মাধ্যমে মহা—পরিচালক প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে আবেদন করেও কোন প্রতিকার পাচ্ছেন না।

সুনামগঞ্জ জেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি হারুন রশিদ জানালেন, অবিলম্বে এসব আদেশ বাতিল এবং বন্ধ করতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের নিকট গেল ১৯ ডিসেম্বর আবেদন করেছিলেন তারা। অধিদপ্তর কর্তৃক প্রশাসনিক কারণ ব্যতিত অফলাইনে সকল প্রকার শিক্ষকদের বদলি বন্ধ করতে দাবি জানানোও হয়েছিল আবেদনে।
কিন্তু মঙ্গলবার তারা জেনেছেন, অধিদপ্তর থেকে সর্বশেষ অফলাইনে বদলি হয়েছে ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এই বদলির আদেশ হয়েছে পেছনের তারিখ দিয়ে। এটিও শুনেছেন তারা। পৌর ও সদর এলাকায় পরিপত্র অনুযায়ী ১০ শতাংশ বাহিরের শিক্ষক বদলি হবার নিয়ম রয়েছে। কোটা শূন্য না থাকলে, আন্ত:উপজেলা, আন্ত:জেলা ও আন্ত: বিভাগ বদলি করা যাবে না। এছাড়া স্বামী বা স্ত্রী’র স্থায়ী ঠিকানা ব্যতিত কোন বদলিও যাতে না হয় এই দাবিও করেছিলেন তারা। শিক্ষকদের আবেদনে উল্লেখ ছিল, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের তথ্য মোতাবেক প্রায় ২৪ শতাংশ পদে বহিরাগত শিক্ষক বা শিক্ষিকা সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় কর্মরত আছেন। যা নীতিমালা বহির্ভূত। আবেদনে শিক্ষকরা লিখেছিলেন, তারা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন।

সুনামগঞ্জ জেলা ও প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ জানান, গেল কিছুদিনে নিয়ম বহিভূর্ত নয়টি বদলি হয়েছে। এগুলো হচ্ছে, জেলার শান্তিগঞ্জ উপজেলার ডিকে সিআর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আল্পনা তালুকদারকে অফলাইনে বদলি করা হয়েছে সুনামগঞ্জ শহরের ষোলঘর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। উজান সাফেলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক তৃপ্তি রায়কে একই বিদ্যালয়ে অফলাইনে বদলি করা হয়েছে। তাহিরপুর উপজেলার পুরান লাউড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক সাজরিনা আক্তার ঝুমাকে সুনামগঞ্জ শহরের কালিবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অফলাইনে বদলি করা হয়েছে। দিরাই উপজেলার হলিমপুর গোবিন্দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খাদিজা বেগম চৌধুরী রুমিকে সুনামগঞ্জ শহরের হোসেন বখ্ত—ফরিদা বখ্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অফলাইনে বদলি করা হয়েছে। বিশ^ম্ভরপুর উপজেলার প্যায়ারিনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মোছাম্মৎ কুহিনুর আখতার খাতুনকে শহরের বড়পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অফলাইনে বদলি করা হয়েছে। জামালগঞ্জ উপজেলার লম্বাবাক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সোনিয়া আক্তারকে অফলাইনে সুনামগঞ্জ শহরতলির ইব্রাহিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি করা হয়েছে। তাহিরপুর উপজেলার আনোয়ারপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সুমি রানী পালকে অফলাইনে হালুয়ারগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি করা হয়েছে। জামালগঞ্জ উপজেলার কামিনিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জনি আক্তারকে বুড়িস্থল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অফলাইনে বদলি করা হয়েছে। সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার রঙ্গারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোছাম্মৎ শারমিন জাহান মনিরাকে সুনামগঞ্জ পৌর এলাকার মল্লিকপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অফলাইনে বদলি করা হয়েছে। এর আগে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার হাসাউড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সন্তোষ কুমার চন্দকে শহরের ষোলঘর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অফলাইন বদলি করা হয়।

এসব নিয়ম বহির্ভূত বদলিতে ক্ষুব্ধ প্রাথমিক শিক্ষকরা বলছেন, উর্ধ্বতনরা সরকারি খরচে মফস্বলে এসে প্রাথমিক শিক্ষকদের পরিশুদ্ধ থাকার পরামর্শ দেন। অথচ ‘শস্যের মধ্যেই ভুতে ভরপূর’। সুনামগঞ্জ শহরের গেল সপ্তাহের বদলি’র পরিপত্রে স্বাক্ষর করেছেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক (পলিসি এণ্ড অপারেশন) তাপস কুমার আচার্য্য। তিনি বললেন, ‘ডিজি মহোদয় বিশেষ বিবেচনায়, তাঁর ক্ষমতা অনুযায়ী বদলি করতে পারেন। ফাইল পাস হয়ে আসলে, আমি কেবল স্বাক্ষর করি।’
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পলিসি এন্ড অপারেশন বিভাগের পরিচালক মো. লুৎফুর রহমান বললেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি এসব বদলি বন্ধ করার জন্য।’

ট্যাগ:

লিবিয়া থেকে ফিরিয়ে আনা হলো ১৭৩ বাংলাদেশিকে

নিয়ম বহির্ভূত বদলিতে সুনামগঞ্জে প্রাথমিক শিক্ষকরা ক্ষুব্ধ

প্রকাশের সময়: ০৬:০০:৪৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪

‘নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে গেল কিছুদিনে অফলাইনে সারাদেশে চার’শ—এর মত প্রাথমিক শিক্ষক বদলি হয়েছেন। এসব বদলি নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রাথমিক শিক্ষকরা। অধিদপ্তরের নীচের পর্যায়ের কর্মকর্তারাও রীতিমত অতিষ্ঠ।

অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, স্বচ্ছতা ও অধিদপ্তরে কাজের চাপ এড়ানোর জন্য অনলাইন বদলি’র নিয়ম কার্যকর করা হয়েছিল। এই পদ্ধতি চালুর জন্য কোটি কোটি টাকা খরচ হয়েছে। স্থানে স্থানে গিয়ে লাখ লাখ টাকা খরচ করে প্রশিক্ষণও দেওয়া হচ্ছে। অথচ গেল কিছুদিনে অফলাইনে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকের চারশ শূন্যপদে বদলির চিঠি ও ফাইল তৈরি করতে হয়েছে তাদের। এটি স্ববিরোধী কাজ। অনেকে পদস্থদের কাছে গিয়ে, কর্মক্ষেত্র বদলেরও জন্য আবদার করছেন বলে একাধিক দায়িত্বশীলরা জানিয়েছেন।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পলিসি এণ্ড অপারেশন বিভাগের একজন কর্মকর্তা বললেন, ‘ডিজি মহোদয় ক্ষমতাবলে বিশেষ বিবেচনায় বদলি করতে পারেন। আমরা সেই ফাইল তৈরি করি। দুই—তিন দিন হয় অনলাইনে বদলির নির্দেশনা দেবার জন্য কথা ওঠেছে। আমরা বলেছি, ভালো ভালো জায়গায় শূন্যপদে অফলাইনে বদলি হয়েছে শত শত শিক্ষক। এখন অনলাইনে বদলির নির্দেশ হাস্যকর হবে।’

এই কর্মকর্তা জানান, তবুও জানুয়ারিতে অনলাইনে বদলি’র নির্দেশনা দেওয়ার কাজ করতে বলা হয়েছে।
সুনামগঞ্জ শহর ও শহরতলির সবকয়টি শূন্যপদে গেল কয়েকদিনে অফলাইনে বদলি করা হয়েছে। অথচ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নীতিমালায় রয়েছে, কেবল জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত অনলাইনে বদলি’র আবেদন করা যাবে এবং সফটওয়ারের মাধ্যমেই বদলি কার্যক্রম সম্পন্ন হবে। কিন্তু সুনামগঞ্জ শহর ও শহরতলির বিদ্যালয়গুলোর শূন্যপদের বদলির ক্ষেত্রে এই আদেশ উপেক্ষিত হয়েছে।

জানা যায়, সুনামগঞ্জ শহর ও শহরতলির প্রায় চারশ শিক্ষক—শিক্ষিকা শহর থেকে প্রত্যন্ত এলাকায় গিয়ে পাঠদান করান। এমনও শিক্ষক—শিক্ষিকা আছেন, যাদের চাকুরির বয়সসীমা শেষ পর্যায়ে। শেষ বয়সে সুবিধাজনক এলাকায় চাকুরি করার জন্য বার বার কর্তৃপক্ষের কাছে ধরণা দিচ্ছেন এরা। কিন্তু কোন ব্যবস্থা হচ্ছে না।

সম্প্রতি সুনামগঞ্জ পৌর এলাকার কালীবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে, ষোলঘর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তিনটি পদ, হোসেন বখ্ত—ফরিদা বখ্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বড়পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মল্লিকপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শহরতলির হালুয়ারগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ইব্রাহিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বুড়িস্থল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকের পদ শূন্য হয়। এই দশটি শূন্যপদের নয়টি পদেই শিক্ষকরা আবেদনেরই সুযোগ পান নি। সর্বশেষ মল্লিকপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের শূন্যপদে অফলাইনে বদলি হয়ে মঙ্গলবার যোগদান করেছেন একজন প্রধান শিক্ষক। অন্যরাও বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় তড়িগড়ি করে অফিসে এসে যোগদান প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছেন।
ক্ষুব্ধ শিক্ষকরা এই বৈষম্যের প্রতিকার চেয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার মাধ্যমে মহা—পরিচালক প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে আবেদন করেও কোন প্রতিকার পাচ্ছেন না।

সুনামগঞ্জ জেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি হারুন রশিদ জানালেন, অবিলম্বে এসব আদেশ বাতিল এবং বন্ধ করতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের নিকট গেল ১৯ ডিসেম্বর আবেদন করেছিলেন তারা। অধিদপ্তর কর্তৃক প্রশাসনিক কারণ ব্যতিত অফলাইনে সকল প্রকার শিক্ষকদের বদলি বন্ধ করতে দাবি জানানোও হয়েছিল আবেদনে।
কিন্তু মঙ্গলবার তারা জেনেছেন, অধিদপ্তর থেকে সর্বশেষ অফলাইনে বদলি হয়েছে ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এই বদলির আদেশ হয়েছে পেছনের তারিখ দিয়ে। এটিও শুনেছেন তারা। পৌর ও সদর এলাকায় পরিপত্র অনুযায়ী ১০ শতাংশ বাহিরের শিক্ষক বদলি হবার নিয়ম রয়েছে। কোটা শূন্য না থাকলে, আন্ত:উপজেলা, আন্ত:জেলা ও আন্ত: বিভাগ বদলি করা যাবে না। এছাড়া স্বামী বা স্ত্রী’র স্থায়ী ঠিকানা ব্যতিত কোন বদলিও যাতে না হয় এই দাবিও করেছিলেন তারা। শিক্ষকদের আবেদনে উল্লেখ ছিল, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের তথ্য মোতাবেক প্রায় ২৪ শতাংশ পদে বহিরাগত শিক্ষক বা শিক্ষিকা সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় কর্মরত আছেন। যা নীতিমালা বহির্ভূত। আবেদনে শিক্ষকরা লিখেছিলেন, তারা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন।

সুনামগঞ্জ জেলা ও প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ জানান, গেল কিছুদিনে নিয়ম বহিভূর্ত নয়টি বদলি হয়েছে। এগুলো হচ্ছে, জেলার শান্তিগঞ্জ উপজেলার ডিকে সিআর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আল্পনা তালুকদারকে অফলাইনে বদলি করা হয়েছে সুনামগঞ্জ শহরের ষোলঘর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। উজান সাফেলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক তৃপ্তি রায়কে একই বিদ্যালয়ে অফলাইনে বদলি করা হয়েছে। তাহিরপুর উপজেলার পুরান লাউড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক সাজরিনা আক্তার ঝুমাকে সুনামগঞ্জ শহরের কালিবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অফলাইনে বদলি করা হয়েছে। দিরাই উপজেলার হলিমপুর গোবিন্দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খাদিজা বেগম চৌধুরী রুমিকে সুনামগঞ্জ শহরের হোসেন বখ্ত—ফরিদা বখ্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অফলাইনে বদলি করা হয়েছে। বিশ^ম্ভরপুর উপজেলার প্যায়ারিনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মোছাম্মৎ কুহিনুর আখতার খাতুনকে শহরের বড়পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অফলাইনে বদলি করা হয়েছে। জামালগঞ্জ উপজেলার লম্বাবাক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সোনিয়া আক্তারকে অফলাইনে সুনামগঞ্জ শহরতলির ইব্রাহিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি করা হয়েছে। তাহিরপুর উপজেলার আনোয়ারপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সুমি রানী পালকে অফলাইনে হালুয়ারগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি করা হয়েছে। জামালগঞ্জ উপজেলার কামিনিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জনি আক্তারকে বুড়িস্থল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অফলাইনে বদলি করা হয়েছে। সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার রঙ্গারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোছাম্মৎ শারমিন জাহান মনিরাকে সুনামগঞ্জ পৌর এলাকার মল্লিকপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অফলাইনে বদলি করা হয়েছে। এর আগে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার হাসাউড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সন্তোষ কুমার চন্দকে শহরের ষোলঘর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অফলাইন বদলি করা হয়।

এসব নিয়ম বহির্ভূত বদলিতে ক্ষুব্ধ প্রাথমিক শিক্ষকরা বলছেন, উর্ধ্বতনরা সরকারি খরচে মফস্বলে এসে প্রাথমিক শিক্ষকদের পরিশুদ্ধ থাকার পরামর্শ দেন। অথচ ‘শস্যের মধ্যেই ভুতে ভরপূর’। সুনামগঞ্জ শহরের গেল সপ্তাহের বদলি’র পরিপত্রে স্বাক্ষর করেছেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক (পলিসি এণ্ড অপারেশন) তাপস কুমার আচার্য্য। তিনি বললেন, ‘ডিজি মহোদয় বিশেষ বিবেচনায়, তাঁর ক্ষমতা অনুযায়ী বদলি করতে পারেন। ফাইল পাস হয়ে আসলে, আমি কেবল স্বাক্ষর করি।’
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পলিসি এন্ড অপারেশন বিভাগের পরিচালক মো. লুৎফুর রহমান বললেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি এসব বদলি বন্ধ করার জন্য।’