প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর সুনামগঞ্জ-১ আসন। হাওর, নদী এবং পাহাড়ের সমন্বয়ে এই আসনে রয়েছে তিনটি শুল্ক স্টেশন, জলমহাল এবং বালুমহাল। এসব উৎস থেকে সরকার প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা রাজস্ব পেয়ে থাকে। অভিযোগ রয়েছে, গত ৩০ বছরে এই আসনে যাঁরা সংসদ সদস্য হয়েছেন, তাঁরা নিজেদের স্বার্থে এসব রাজস্বের অপব্যবহার করেছেন। সাবেক এমপি মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের সময়ে এই লুটপাট বাড়তে শুরু করে। আর সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট রনজিত চন্দ্র সরকারের স্বল্প মেয়াদকালে এই লুটপাট প্রকট আকার ধারণ করে।
অ্যাড. রনজিত চন্দ্র সরকার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর বিভিন্ন বাজার, নৌঘাট এবং অন্যান্য রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে ‘খাস কালেকশন’ এর নামে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট বাজার, ফাজিলপুর নৌঘাট এবং শ্রীপুর নৌঘাটে এই চাঁদাবাজি ও লুটপাটের ঘটনা বেশি ঘটেছে।
রাজস্ব লুটের কৌশল ও ইজারা সংকট**
২০২৩ সালে বাদাঘাট বাজার ৫০ লাখ টাকায় এবং ঘাগড়া নৌঘাট ৮৮ লাখ টাকায় ইজারা দেওয়া হয়েছিল। তবে ২০২৪ সালে অ্যাডভোকেট রনজিত চন্দ্র সরকার সংসদ সদস্য হওয়ার পর এই বাজার এবং ঘাটগুলোতে কোনো ইজারা দেওয়া হয়নি। ‘মামলা জটিলতার’ অজুহাত দেখিয়ে ‘খাস কালেকশন’-এর মাধ্যমে নামমাত্র রাজস্ব সরকারের কোষাগারে জমা দিয়ে বাকি অর্থ লুটপাট করা হয়।
তাহিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এখলাছুর রহমান তারাসহ কয়েকজন স্থানীয় নেতা এই লুটপাটে সরাসরি জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে ছাত্র ও সাধারণ জনতার প্রতিবাদে এই সিন্ডিকেট অনেকটা দুর্বল হয়ে পড়ে।
ড্রেজার মেশিনে বালু উত্তোলনের পরিবেশ বিধ্বংসী কার্যক্রম**
অ্যাডভোকেট রনজিত সরকারের সময়ে যাদুকাটা নদীতে অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করা হয়। এতে নদীর তীরবর্তী গ্রামগুলো ভাঙনের মুখে পড়ে। স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, সাবেক এমপি রনজিতের অনুগত কিছু নেতা ও ইউপি সদস্য রানু মেম্বার বালু উত্তোলন কার্যক্রমের নেতৃত্বে ছিলেন।
বিএনপি নেতাদের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ**
সরকার পরিবর্তনের পর বর্তমানে বিএনপির স্থানীয় নেতা আবুল কালাম আজাদের নেতৃত্বে ড্রেজার মেশিনের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে আবুল কালাম আজাদ এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, তিনি পরিবেশ কর্মী হিসেবে কাজ করেন এবং এই ধরনের কার্যক্রমের সঙ্গে কোনোদিনও জড়িত ছিলেন না।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবুল হাসেম জানিয়েছেন, বাদাঘাট বাজারসহ অন্যান্য হাট-বাজার থেকে উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে খাস কালেকশন আদায়ের চেষ্টা চলছে। আদালতের মামলাগুলোর নিষ্পত্তি হলে নিয়মিত ইজারা ব্যবস্থায় ফেরা সম্ভব হবে।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থী আনিসুর রহমান সাকিব বলেছেন, সাবেক এমপি মোয়াজ্জেম হোসেন রতন ও অ্যাডভোকেট রনজিত চন্দ্র সরকার রাজস্ব লুটপাটের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। খাস কালেকশন পদ্ধতি বন্ধ করে নিয়মিত ইজারা ব্যবস্থার দাবি জানিয়েছেন তিনি।
স্থানীয়দের মতে, বাদাঘাট বাজারসহ অন্যান্য হাট-বাজারে ইজারা পদ্ধতি চালু থাকলে সরকার আরও বেশি রাজস্ব পাবে, যা বাজার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
কালনী ভিউ ডেস্ক : 









