লন্ডন ১২:৫৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সুনামগঞ্জে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মামলার জালে বন্দি

 

বাংলাদেশ ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ ঘোষণার পর সুনামগঞ্জের ১২ উপজেলায় সংগঠনটির নেতাকর্মীরা মামলার মুখে পড়েছেন। প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও গ্রেপ্তার হচ্ছেন তারা। সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় অনেক নেতাকর্মী ইতোমধ্যে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মন্তব্য করা ছাড়া তাদের কার্যক্রম সীমিত হয়ে পড়েছে।

২৩ অক্টোবর সরকার প্রজ্ঞাপন জারি করে বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে ‘সন্ত্রাস বিরোধী আইন, ২০০৯’ অনুযায়ী নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এরপর থেকেই সুনামগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলায় সংগঠনটির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দায়ের করা হয়। সাতটি থানায় মোট ১৫১ জনের নামোল্লেখ করে এবং ১৮৫ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা হয়েছে।

নিষিদ্ধ ঘোষণার পর কিছু উপজেলায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিজয় দিবসসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের চেষ্টা করলেও পুলিশ তা কঠোরভাবে প্রতিহত করে। সর্বশেষ রবিবার (২৮ জানুয়ারি) সুনামগঞ্জ সদর থানায় নতুন করে নাশকতার অভিযোগে মামলা হয়েছে, যেখানে ১৫ জনের নামোল্লেখসহ ৩০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। মামলার প্রধান আসামি হিসেবে আতাহার সুমন নয়ন (২৭) নামের এক কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এছাড়া, দোয়ারাবাজার থানায় ছাত্রলীগের উপজেলা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ১২ জনের নামোল্লেখ করে ২০-২৫ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়, যেখানে ইতোমধ্যে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জগন্নাথপুরে ৫২ জনের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় পাঁচজন গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন।

ধর্মপাশায় ৫ ডিসেম্বর দায়ের হওয়া মামলায় ১৮ জনের নামোল্লেখসহ ১৫-২০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে, যেখানে ছয়জন গ্রেপ্তার হয়েছেন। শান্তিগঞ্জে ৪ ডিসেম্বর দায়ের হওয়া মামলায় পাঁচ নেতার নামোল্লেখসহ ১০-১২ জন অজ্ঞাতনামা আসামি হিসেবে যুক্ত করা হয়। রবিবার (২৮ জানুয়ারি) সাবেক পরিকল্পনা মন্ত্রী এমএ মান্নানের এপিএস জুয়েল মিয়াকে এই মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়।

তাহিরপুরে ১৭ ডিসেম্বরের মামলায় উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ২৪ জনের নামোল্লেখ এবং ৭০-৮০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। সোমবার (২৯ জানুয়ারি) আশরাফুল ইসলাম নামের এক কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মধ্যনগরে ১৫ জনের নামোল্লেখসহ ২০ জন অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা হয়েছে, যেখানে তিনজন গ্রেপ্তার হয়েছেন।

নিষিদ্ধ ঘোষণার পর ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও কম সক্রিয়। যারা মন্তব্য করছেন, তাদের অনেকেই দলের নেতৃত্বের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।

এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের এক সহসভাপতি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “একসময় ইসলামী ছাত্র শিবিরকেও নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, ছাত্রদলকেও নাশকতার মামলায় হয়রানি করা হয়েছে। এখন সেই পরিস্থিতির শিকার হচ্ছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। তবে দীর্ঘমেয়াদে সংগঠনটি নিষিদ্ধ থাকবে না বলে আমি মনে করি।”

এদিকে সুনামগঞ্জের বিভিন্ন থানার ওসি জানিয়েছেন, নিষিদ্ধ সংগঠনের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে তারা সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

ট্যাগ:

রাত সাড়ে ৯টার পর সিলেটের সব বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে

সুনামগঞ্জে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মামলার জালে বন্দি

প্রকাশের সময়: ০৮:৩২:৫০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

 

বাংলাদেশ ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ ঘোষণার পর সুনামগঞ্জের ১২ উপজেলায় সংগঠনটির নেতাকর্মীরা মামলার মুখে পড়েছেন। প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও গ্রেপ্তার হচ্ছেন তারা। সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় অনেক নেতাকর্মী ইতোমধ্যে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মন্তব্য করা ছাড়া তাদের কার্যক্রম সীমিত হয়ে পড়েছে।

২৩ অক্টোবর সরকার প্রজ্ঞাপন জারি করে বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে ‘সন্ত্রাস বিরোধী আইন, ২০০৯’ অনুযায়ী নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এরপর থেকেই সুনামগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলায় সংগঠনটির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দায়ের করা হয়। সাতটি থানায় মোট ১৫১ জনের নামোল্লেখ করে এবং ১৮৫ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা হয়েছে।

নিষিদ্ধ ঘোষণার পর কিছু উপজেলায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিজয় দিবসসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের চেষ্টা করলেও পুলিশ তা কঠোরভাবে প্রতিহত করে। সর্বশেষ রবিবার (২৮ জানুয়ারি) সুনামগঞ্জ সদর থানায় নতুন করে নাশকতার অভিযোগে মামলা হয়েছে, যেখানে ১৫ জনের নামোল্লেখসহ ৩০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। মামলার প্রধান আসামি হিসেবে আতাহার সুমন নয়ন (২৭) নামের এক কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এছাড়া, দোয়ারাবাজার থানায় ছাত্রলীগের উপজেলা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ১২ জনের নামোল্লেখ করে ২০-২৫ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়, যেখানে ইতোমধ্যে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জগন্নাথপুরে ৫২ জনের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় পাঁচজন গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন।

ধর্মপাশায় ৫ ডিসেম্বর দায়ের হওয়া মামলায় ১৮ জনের নামোল্লেখসহ ১৫-২০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে, যেখানে ছয়জন গ্রেপ্তার হয়েছেন। শান্তিগঞ্জে ৪ ডিসেম্বর দায়ের হওয়া মামলায় পাঁচ নেতার নামোল্লেখসহ ১০-১২ জন অজ্ঞাতনামা আসামি হিসেবে যুক্ত করা হয়। রবিবার (২৮ জানুয়ারি) সাবেক পরিকল্পনা মন্ত্রী এমএ মান্নানের এপিএস জুয়েল মিয়াকে এই মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়।

তাহিরপুরে ১৭ ডিসেম্বরের মামলায় উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ২৪ জনের নামোল্লেখ এবং ৭০-৮০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। সোমবার (২৯ জানুয়ারি) আশরাফুল ইসলাম নামের এক কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মধ্যনগরে ১৫ জনের নামোল্লেখসহ ২০ জন অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা হয়েছে, যেখানে তিনজন গ্রেপ্তার হয়েছেন।

নিষিদ্ধ ঘোষণার পর ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও কম সক্রিয়। যারা মন্তব্য করছেন, তাদের অনেকেই দলের নেতৃত্বের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।

এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের এক সহসভাপতি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “একসময় ইসলামী ছাত্র শিবিরকেও নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, ছাত্রদলকেও নাশকতার মামলায় হয়রানি করা হয়েছে। এখন সেই পরিস্থিতির শিকার হচ্ছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। তবে দীর্ঘমেয়াদে সংগঠনটি নিষিদ্ধ থাকবে না বলে আমি মনে করি।”

এদিকে সুনামগঞ্জের বিভিন্ন থানার ওসি জানিয়েছেন, নিষিদ্ধ সংগঠনের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে তারা সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।