লন্ডন ০৩:০৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দিরাইয়ে বাঁধের কাজে বিশাল অনিয়ম, কৃষকদের ক্ষোভ

 

সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার বরাম হাওরের বোয়ালিয়া বাঁধসহ বিভিন্ন হাওর রক্ষা বাঁধের কাজে ধীরগতি ও অবহেলার অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় কৃষকদের আশঙ্কা, সঠিক সময়ে কাজ শেষ না হলে অকাল বন্যায় হাজার হাজার হেক্টর জমির ফসল বিনষ্ট হতে পারে।

দিরাই উপজেলার রাজাপুরের বাসিন্দা ও সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুস ছত্তার বলেন, “কালনী নদীতে পানি দেখা যাচ্ছে না, তাই প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজনও তেমন তৎপর নয়। তাদের ধারণা, পানি না এলে কাজ না করলেও সমস্যা নেই। বরাদ্দের টাকা ভাগ-বাটোয়ারা হয়ে যাবে, ফলে বাঁধের কাজ পানির অপেক্ষায় আছে।”

তিনি জানান, বোয়ালিয়া বাঁধে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মাত্র ৪০-৪৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ, কালনী নদীতে পানি কম থাকায় পিআইসি’র লোকজন মনে করছে, আবহাওয়া ভালো থাকলে পানি নাও আসতে পারে, তাই কষ্ট করে কাজ করার প্রয়োজন নেই। এই পরিস্থিতিতে হাওর রক্ষা বাঁধের কাজ সম্পন্ন না হলে মারাত্মক বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে।

এ বিষয়ে কৃষক নেতা আব্দুস ছত্তার আরও বলেন, বরাম হাওরের মাছুয়ারখাড়া বাঁধেও মাত্র ৪০ শতাংশ কাজ হয়েছে। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে, বোয়ালিয়া বাঁধ ভেঙে গেলে মাছুয়ারখাড়ার বাঁধও ক্ষতিগ্রস্ত হবে, যার ফলে কাইলানি, ছায়ার হাওরসহ পশ্চিমাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকার ফসল পানির নিচে তলিয়ে যাবে। তিনি বলেন, “আমি পিআইসির লোকজনকে জানিয়ে দিয়েছি, অনিয়মের কারণে কোনো ক্ষতি হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মামলা করবো।”

বোয়ালিয়া বাঁধের পাশের গ্রাম আমিরপুরের কৃষক শামছুল হক জানান, বাঁধের ৪৫ শতাংশের বেশি কাজ এখনও হয়নি।

হাওর রক্ষা বাঁধের কাজের নির্ধারিত সময়সীমা গত শুক্রবার শেষ হলেও অনেক এলাকায় কাজ অসম্পূর্ণ রয়েছে। জামালগঞ্জের বিভিন্ন বাঁধ পরিদর্শন করে গণমাধ্যমকর্মীরা দেখেছেন, অনেক পিআইসি সদস্য কাজ শেষ না করেই এলাকা ছেড়ে চলে গেছেন。

কিছু বাঁধে শ্রমিকদের কাজ করতে দেখা গেলেও অধিকাংশ বাঁধ ও ক্লোজারের রক্ষণাবেক্ষণের কাজ এখনো বাকি রয়েছে। নির্ধারিত সময় শেষ হলেও অনেক বাঁধে এখনো দুর্বা লাগানো হয়নি, করা হয়নি দুরমুশ। কৃষকদের মতে, এখনো প্রায় ৩০ শতাংশ কাজ বাকি থাকলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দাবি করছে, ৯০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। তবে বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার জানান, শনিবার পর্যন্ত ৬৮৭টি প্রকল্পের ৯০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এরমধ্যে ১০৫টি ক্লোজারের ৯৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। তিনি আরও জানান, বাঁধের কাজের মেয়াদ ২৮ ফেব্রুয়ারি নির্ধারিত থাকলেও আরও ১০ দিন সময় বাড়ানোর জন্য পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে, যা এখনো অনুমোদিত হয়নি।

উল্লেখ্য, সুনামগঞ্জের ১২ উপজেলার দুই লাখ ২৩ হাজার ৫০২ হেক্টর জমিতে এবার বোরো চাষাবাদ হয়েছে। অকাল বন্যা থেকে এসব ফসল রক্ষায় ১২৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬৮৭টি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির মাধ্যমে বাঁধ নির্মাণের কাজ চলছে। নির্দেশনা অনুযায়ী, ১৫ ডিসেম্বর থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বাঁধের কাজ শেষ করার কথা ছিল। তবে বাস্তবে কাজের ধীরগতির কারণে কৃষকদের মাঝে শঙ্কা বিরাজ করছে।

 

ট্যাগ:

রাত সাড়ে ৯টার পর সিলেটের সব বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে

দিরাইয়ে বাঁধের কাজে বিশাল অনিয়ম, কৃষকদের ক্ষোভ

প্রকাশের সময়: ০৯:২৫:০৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২ মার্চ ২০২৫

 

সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার বরাম হাওরের বোয়ালিয়া বাঁধসহ বিভিন্ন হাওর রক্ষা বাঁধের কাজে ধীরগতি ও অবহেলার অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় কৃষকদের আশঙ্কা, সঠিক সময়ে কাজ শেষ না হলে অকাল বন্যায় হাজার হাজার হেক্টর জমির ফসল বিনষ্ট হতে পারে।

দিরাই উপজেলার রাজাপুরের বাসিন্দা ও সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুস ছত্তার বলেন, “কালনী নদীতে পানি দেখা যাচ্ছে না, তাই প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজনও তেমন তৎপর নয়। তাদের ধারণা, পানি না এলে কাজ না করলেও সমস্যা নেই। বরাদ্দের টাকা ভাগ-বাটোয়ারা হয়ে যাবে, ফলে বাঁধের কাজ পানির অপেক্ষায় আছে।”

তিনি জানান, বোয়ালিয়া বাঁধে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মাত্র ৪০-৪৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ, কালনী নদীতে পানি কম থাকায় পিআইসি’র লোকজন মনে করছে, আবহাওয়া ভালো থাকলে পানি নাও আসতে পারে, তাই কষ্ট করে কাজ করার প্রয়োজন নেই। এই পরিস্থিতিতে হাওর রক্ষা বাঁধের কাজ সম্পন্ন না হলে মারাত্মক বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে।

এ বিষয়ে কৃষক নেতা আব্দুস ছত্তার আরও বলেন, বরাম হাওরের মাছুয়ারখাড়া বাঁধেও মাত্র ৪০ শতাংশ কাজ হয়েছে। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে, বোয়ালিয়া বাঁধ ভেঙে গেলে মাছুয়ারখাড়ার বাঁধও ক্ষতিগ্রস্ত হবে, যার ফলে কাইলানি, ছায়ার হাওরসহ পশ্চিমাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকার ফসল পানির নিচে তলিয়ে যাবে। তিনি বলেন, “আমি পিআইসির লোকজনকে জানিয়ে দিয়েছি, অনিয়মের কারণে কোনো ক্ষতি হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মামলা করবো।”

বোয়ালিয়া বাঁধের পাশের গ্রাম আমিরপুরের কৃষক শামছুল হক জানান, বাঁধের ৪৫ শতাংশের বেশি কাজ এখনও হয়নি।

হাওর রক্ষা বাঁধের কাজের নির্ধারিত সময়সীমা গত শুক্রবার শেষ হলেও অনেক এলাকায় কাজ অসম্পূর্ণ রয়েছে। জামালগঞ্জের বিভিন্ন বাঁধ পরিদর্শন করে গণমাধ্যমকর্মীরা দেখেছেন, অনেক পিআইসি সদস্য কাজ শেষ না করেই এলাকা ছেড়ে চলে গেছেন。

কিছু বাঁধে শ্রমিকদের কাজ করতে দেখা গেলেও অধিকাংশ বাঁধ ও ক্লোজারের রক্ষণাবেক্ষণের কাজ এখনো বাকি রয়েছে। নির্ধারিত সময় শেষ হলেও অনেক বাঁধে এখনো দুর্বা লাগানো হয়নি, করা হয়নি দুরমুশ। কৃষকদের মতে, এখনো প্রায় ৩০ শতাংশ কাজ বাকি থাকলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দাবি করছে, ৯০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। তবে বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার জানান, শনিবার পর্যন্ত ৬৮৭টি প্রকল্পের ৯০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এরমধ্যে ১০৫টি ক্লোজারের ৯৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। তিনি আরও জানান, বাঁধের কাজের মেয়াদ ২৮ ফেব্রুয়ারি নির্ধারিত থাকলেও আরও ১০ দিন সময় বাড়ানোর জন্য পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে, যা এখনো অনুমোদিত হয়নি।

উল্লেখ্য, সুনামগঞ্জের ১২ উপজেলার দুই লাখ ২৩ হাজার ৫০২ হেক্টর জমিতে এবার বোরো চাষাবাদ হয়েছে। অকাল বন্যা থেকে এসব ফসল রক্ষায় ১২৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬৮৭টি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির মাধ্যমে বাঁধ নির্মাণের কাজ চলছে। নির্দেশনা অনুযায়ী, ১৫ ডিসেম্বর থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বাঁধের কাজ শেষ করার কথা ছিল। তবে বাস্তবে কাজের ধীরগতির কারণে কৃষকদের মাঝে শঙ্কা বিরাজ করছে।