ইউরোপগামী ও চিকিৎসাপ্রার্থী সিলেট অঞ্চলের হাজারো মানুষ ভারতীয় ভিসা সংকটে পড়েছেন। বিশেষ করে পর্তুগাল ও পোল্যান্ডে কাজের ভিসা নিয়ে যেতে ইচ্ছুক তরুণ-যুবকরা এখন মারাত্মক ভোগান্তিতে রয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে ভারতীয় ‘ডাবল এন্ট্রি’ ভিসা না মেলায় ইউরোপে যাওয়ার সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেও মাঝপথে আটকে যাচ্ছেন তারা।
ছাতক উপজেলার মইনপুর গ্রামের মো. জাবেদ হোসেন কয়েক লাখ টাকা খরচ করে দালালের মাধ্যমে পর্তুগালের ওয়ার্ক পারমিট হাতে পেয়েছেন। পারমিট অনুযায়ী আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর দিল্লির ভিসা সেন্টারে ফাইল জমা দেওয়ার কথা থাকলেও অনলাইনে বারবার চেষ্টা করেও ভারতীয় ভিসা ফি দিতে না পারায় তিনি তারিখ পাননি। ফলে বিদেশযাত্রা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
শুধু জাবেদ নন-সিলেটের অসংখ্য তরুণ এভাবেই বিপাকে পড়েছেন। প্রবাসীবহুল এ অঞ্চল থেকে প্রতিবছর বিপুল সংখ্যক মানুষ ইউরোপে পাড়ি জমালেও গত এক বছরে সেই সংখ্যা দৃশ্যমানভাবে কমে এসেছে।
জানা গেছে, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট থেকে ভারতীয় ডাবল এন্ট্রি ভিসা প্রায় একেবারেই বন্ধ। বাংলাদেশে যেসব দেশের হাইকমিশন নেই, সেসব দেশে যাওয়ার জন্য দিল্লির ভিসা সেন্টারে আবেদন জমা দেওয়ার একমাত্র পথ এই ভিসা। ফলে বিশেষ করে ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে ইউরোপ যাওয়ার স্বপ্ন দেখাদের জন্য এটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এছাড়া সীমিত আকারে মেডিকেল ভিসা দেওয়া হলেও সেটি সহজলভ্য নয়। এতে জরুরি চিকিৎসার জন্য ভারত যেতে ইচ্ছুক অনেক রোগীও বিপাকে পড়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, একটি দালালচক্র মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে এসব ভিসা পাইয়ে দিচ্ছে।
সিলেটস্থ ভারতীয় সহকারি হাই কমিশনের একটি সূত্র জানিয়েছে, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের পাশাপাশি প্রযুক্তিগত জটিলতাও বড় কারণ। তাদের দাবি, ভিসা আবেদন প্রক্রিয়ার ওয়েবসাইট (আইভিসি) অনেকাংশেই এখন হ্যাকারদের নিয়ন্ত্রণে। ফলে সাধারণ আবেদনকারী ভিসা ফি দিতে পারছেন না এবং ভিসা সেন্টারে ফাইল জমা দেওয়ার তারিখও পাচ্ছেন না।
সহকারি হাই কমিশনের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, অনেকে নিজেদেরকে ভিসা করিয়ে দেওয়ার ক্ষমতাবান দাবি করছে। অথচ তারা কারা—এটাই প্রশ্ন। অনেক মানুষ কম্পিউটার দোকান বা ট্রাভেল এজেন্সির দারস্থ হয়ে প্রতারিত হচ্ছেন। এমনকি পুরনো হাসপাতালের অ্যাপয়েন্টমেন্টে নাম পাল্টে নতুন আবেদন তৈরি করার ঘটনাও ঘটছে।
হাই কমিশন সূত্র দাবি করেছে, তারা কয়েকজন হ্যাকার সনাক্ত করে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশকে অবগত করেছে। তবে পুলিশ কমিশনার মো. রেজাউল করিম বলেন, আমাকে কেউ অবগত করেনি। ওয়েবসাইট হ্যাকিং হয়েছে কিনা সেটিও আমার জানা নেই, এটা হাই কমিশন ভালো বলতে পারবে।
এ অবস্থায় কবে ভিসা সংকট কাটবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা বাড়ছে। বিদেশযাত্রার স্বপ্ন দেখা তরুণেরা যেমন হতাশ, তেমনি জরুরি চিকিৎসার জন্য অপেক্ষায় থাকা রোগীরাও পড়েছেন দুশ্চিন্তায়।
সূত্র-সি টুডে
কালনী ভিউ ডেস্কঃ 









