লন্ডন ১০:১৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পিয়ন থেকে কোটিপতি, ছাতক এলজিইডি অফিসে রিয়াজের প্রভাব বিস্তার

সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) কার্যালয় ঘুস ও দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে—এমন অভিযোগ উঠেছে। এসব অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন কার্যালয়ের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক মো. রিয়াজ মিয়া। একসময় পিয়ন পদে চাকরি শুরু করা এই কর্মচারী এখন এলাকায় ‘কোটিপতি অফিস সহকারী’ নামে পরিচিত।

এক যুগ ধরে একই কর্মস্থলে

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রিয়াজ মিয়া প্রায় এক যুগ ধরে ছাতক এলজিইডি অফিসে কর্মরত। এর মধ্যে প্রায় আট বছর তিনি পিয়ন পদে কাজ করেছেন। ২০২০ সালের ৩০ ডিসেম্বর তিনি অফিস সহকারী পদে পদোন্নতি পান। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী তিন বছর পূর্ণ হলে বদলি হওয়া বাধ্যতামূলক হলেও, নানা কৌশলে তিনি দীর্ঘদিন একই কর্মস্থলে রয়েছেন বলে অভিযোগ।

স্থানীয়দের দাবি, রাজনৈতিক প্রভাব ও মোটা অঙ্কের ঘুসের বিনিময়ে রিয়াজ মিয়া নিজের বদলি ঠেকিয়ে রেখেছেন।

‘ঘুস ছাড়া কোনো কাজ হয় না’

স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, রিয়াজ মিয়া প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা, ঠিকাদার ও অফিসের কিছু অসাধু কর্মকর্তাকে সঙ্গে নিয়ে একটি দুর্নীতিবান্ধব সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। সরকারি নথি ঠিকাদারদের সরবরাহ, বিল অনুমোদনে ঘুস নেওয়াসহ নানা অনিয়মে তিনি জড়িত।

ভুক্তভোগী কয়েকজন ঠিকাদার অভিযোগ করেন, প্রতিটি প্রকল্পের বিল পাস করাতে হলে রিয়াজের নির্দেশেই দিতে হয় শতকরা দুই শতাংশ ঘুস। ঘুস না দিলে ফাইল আটকে রাখা বা বিল স্থগিতের ভয় দেখানো হয়। এতে ঠিকাদারদের হয়রানির শিকার হতে হয় এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন বিলম্বিত হয়।

একজন ঠিকাদার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘রিয়াজ ছাড়া এই অফিসে কোনো কাজ হয় না। বিল পাস থেকে শুরু করে ফাইলের অগ্রগতি—সব কিছুতেই তার হস্তক্ষেপ। তিনি নিজেকে প্রকৌশলী হিসেবেই উপস্থাপন করেন।’

সহকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ

অফিসের একাধিক কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, পদোন্নতির পর রিয়াজ মিয়ার আচরণে পরিবর্তন এসেছে। আগে তিনি সবার সঙ্গে ভদ্র আচরণ করলেও এখন অহংকারী হয়ে উঠেছেন। সহকর্মীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন এবং অফিসে অস্বস্তিকর পরিবেশ তৈরি করেছেন।

রাজনৈতিক প্রভাব ও ‘বিশেষ সম্পর্ক’

ছাত্রলীগ-ঘনিষ্ঠ এক প্রভাবশালী ঠিকাদারের সঙ্গে রিয়াজ মিয়ার ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের বিষয়টিও এলাকায় আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, ওই ঠিকাদারের কাজের ফাইল ও বিল প্রক্রিয়ায় তিনি বিশেষ সুবিধা দেন এবং বিনিময়ে আর্থিক লেনদেন হয় নিয়মিত।

তদন্তের দাবি

স্থানীয় সচেতন মহলের দাবি, এলজিইডির মতো গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে এক কর্মচারীর দীর্ঘদিন একই জায়গায় বহাল থাকা এবং ঘুস-দুর্নীতির অভিযোগ প্রশাসনিক তদারকির ব্যর্থতারই প্রতিফলন। তাঁরা দ্রুত তদন্ত করে রিয়াজ মিয়াসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

অভিযুক্তের বক্তব্য

অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে রিয়াজ মিয়া বলেন, ‘সব অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট। আমি নিয়ম অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করছি। আমার নিয়ন্ত্রণে অফিস থাকার প্রশ্নই আসে না।’

ছাতক উপজেলা এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি নতুন যোগ দিয়েছি। সে অনেক দিন ধরে এখানে আছে, তাই মানুষ ভাবে অফিসটা তার নিয়ন্ত্রণে। কর্তৃপক্ষ চাইলে বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে পারে।’

মূল রিপোর্ট: দৈ. যু.

ট্যাগ:
জনপ্রিয়

পিয়ন থেকে কোটিপতি, ছাতক এলজিইডি অফিসে রিয়াজের প্রভাব বিস্তার

প্রকাশের সময়: ১০:২৫:০৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২২ অক্টোবর ২০২৫

সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) কার্যালয় ঘুস ও দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে—এমন অভিযোগ উঠেছে। এসব অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন কার্যালয়ের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক মো. রিয়াজ মিয়া। একসময় পিয়ন পদে চাকরি শুরু করা এই কর্মচারী এখন এলাকায় ‘কোটিপতি অফিস সহকারী’ নামে পরিচিত।

এক যুগ ধরে একই কর্মস্থলে

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রিয়াজ মিয়া প্রায় এক যুগ ধরে ছাতক এলজিইডি অফিসে কর্মরত। এর মধ্যে প্রায় আট বছর তিনি পিয়ন পদে কাজ করেছেন। ২০২০ সালের ৩০ ডিসেম্বর তিনি অফিস সহকারী পদে পদোন্নতি পান। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী তিন বছর পূর্ণ হলে বদলি হওয়া বাধ্যতামূলক হলেও, নানা কৌশলে তিনি দীর্ঘদিন একই কর্মস্থলে রয়েছেন বলে অভিযোগ।

স্থানীয়দের দাবি, রাজনৈতিক প্রভাব ও মোটা অঙ্কের ঘুসের বিনিময়ে রিয়াজ মিয়া নিজের বদলি ঠেকিয়ে রেখেছেন।

‘ঘুস ছাড়া কোনো কাজ হয় না’

স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, রিয়াজ মিয়া প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা, ঠিকাদার ও অফিসের কিছু অসাধু কর্মকর্তাকে সঙ্গে নিয়ে একটি দুর্নীতিবান্ধব সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। সরকারি নথি ঠিকাদারদের সরবরাহ, বিল অনুমোদনে ঘুস নেওয়াসহ নানা অনিয়মে তিনি জড়িত।

ভুক্তভোগী কয়েকজন ঠিকাদার অভিযোগ করেন, প্রতিটি প্রকল্পের বিল পাস করাতে হলে রিয়াজের নির্দেশেই দিতে হয় শতকরা দুই শতাংশ ঘুস। ঘুস না দিলে ফাইল আটকে রাখা বা বিল স্থগিতের ভয় দেখানো হয়। এতে ঠিকাদারদের হয়রানির শিকার হতে হয় এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন বিলম্বিত হয়।

একজন ঠিকাদার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘রিয়াজ ছাড়া এই অফিসে কোনো কাজ হয় না। বিল পাস থেকে শুরু করে ফাইলের অগ্রগতি—সব কিছুতেই তার হস্তক্ষেপ। তিনি নিজেকে প্রকৌশলী হিসেবেই উপস্থাপন করেন।’

সহকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ

অফিসের একাধিক কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, পদোন্নতির পর রিয়াজ মিয়ার আচরণে পরিবর্তন এসেছে। আগে তিনি সবার সঙ্গে ভদ্র আচরণ করলেও এখন অহংকারী হয়ে উঠেছেন। সহকর্মীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন এবং অফিসে অস্বস্তিকর পরিবেশ তৈরি করেছেন।

রাজনৈতিক প্রভাব ও ‘বিশেষ সম্পর্ক’

ছাত্রলীগ-ঘনিষ্ঠ এক প্রভাবশালী ঠিকাদারের সঙ্গে রিয়াজ মিয়ার ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের বিষয়টিও এলাকায় আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, ওই ঠিকাদারের কাজের ফাইল ও বিল প্রক্রিয়ায় তিনি বিশেষ সুবিধা দেন এবং বিনিময়ে আর্থিক লেনদেন হয় নিয়মিত।

তদন্তের দাবি

স্থানীয় সচেতন মহলের দাবি, এলজিইডির মতো গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে এক কর্মচারীর দীর্ঘদিন একই জায়গায় বহাল থাকা এবং ঘুস-দুর্নীতির অভিযোগ প্রশাসনিক তদারকির ব্যর্থতারই প্রতিফলন। তাঁরা দ্রুত তদন্ত করে রিয়াজ মিয়াসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

অভিযুক্তের বক্তব্য

অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে রিয়াজ মিয়া বলেন, ‘সব অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট। আমি নিয়ম অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করছি। আমার নিয়ন্ত্রণে অফিস থাকার প্রশ্নই আসে না।’

ছাতক উপজেলা এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি নতুন যোগ দিয়েছি। সে অনেক দিন ধরে এখানে আছে, তাই মানুষ ভাবে অফিসটা তার নিয়ন্ত্রণে। কর্তৃপক্ষ চাইলে বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে পারে।’

মূল রিপোর্ট: দৈ. যু.