লন্ডন ০৯:০৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দিরাই শাল্লায় বিএনপির প্রার্থী নিয়ে ধোঁয়াশা, কেন্দ্রের দিকে তাকিয়ে আছে তৃণমূল

সন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি সারাদেশে ২৩৭টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করলেও সুনামগঞ্জ-২ (দিরাই-শাল্লা) আসনটি এখনো অনিশ্চয়তার তালিকায় রয়েছে। এ আসনে কে হচ্ছেন ধানের শীষের প্রার্থী তা নিয়ে এখন জোর আলোচনা চলছে তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সুনামগঞ্জ-২ আসনে মনোনয়নের দৌড়ে এগিয়ে ছিলেন, সাবেক সংসদ সদস্য নাসির উদ্দিন চৌধুরী, সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক উপদেষ্টা, সাবেক ছাত্রনেতা তাহির রায়হান চৌধুরী পাবেল, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, সাবেক সংসদ সদস্য মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরী রুমি।

নাসির উদ্দিন চৌধুরী দীর্ঘদিন দলের জন্য কাজ করেছেন। এলাকায় তাঁর জনপ্রিয়তা ও সাংগঠনিক প্রভাব যথেষ্ট বলেই মনে করেন তৃণমূল নেতাকর্মীরা। তবে সাম্প্রতিক সময়ে অসুস্থতার কারণে তিনি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে কিছুটা নিষ্ক্রিয় ছিলেন। অন্যদিকে তাহির রায়হান চৌধুরী পাবেল গত কয়েক বছর বিএনপির দুর্দিনে মাঠে থেকে দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন। দিরাই-শাল্লার সাধারণ মানুষের মধ্যে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে। অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরী রুমি ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।

দিরাই-শাল্লা আসনটি এক সময় আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা প্রয়াত সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ছিল। মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী প্রায় সব নির্বাচনে তিনি বিজয়ী হয়েছেন। তবে এর বাইরে ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট ক্ষমতায় থাকাকালে মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরী রুমি ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। একই বছরের জুনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে নাসির উদ্দিন চৌধুরী জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে জয়ী হন।প্রয়াত সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রী জয়া সেনগুপ্ত ২০১৭ সালের উপ-নির্বাচনে এবং ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পরপর দুইবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বর্তমানে তাঁর অনুপস্থিতিতে আসনটি আবারও রাজনৈতিকভাবে সরগরম হয়ে উঠেছে। এই আসনের ভোটারদের প্রায় অর্ধেকই হিন্দু সম্প্রদায়ের হওয়ায় প্রতি নির্বাচনে ভোটের সমীকরণ বেশ জটিল হয়ে ওঠে। ধর্মীয় ও সামাজিক ভারসাম্য, প্রার্থীর ব্যক্তিগত গ্রহণযোগ্যতা-সবকিছু মিলিয়ে এ আসনে জয় পেতে হলে দরকার সর্বস্তরের আস্থা অর্জন।

তৃণমূল বিএনপির অনেক নেতা মনে করেন, সমমনা দলের প্রার্থী দিলে এখানে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পাওয়া কঠিন হবে, তাই কেন্দ্রীয় বিএনপি নিজস্ব প্রার্থী দেবে বলেই তারা আশাবাদী।

এদিকে বিএনপির প্রার্থী ঘোষণায় বিলম্ব হওয়ায় সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে জামায়াতে ইসলামী। দলটির মনোনীত প্রার্থী সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শিশির মনির ইতোমধ্যে বিভিন্ন ইউনিয়নে মিছিল-মিটিং ও উঠান বৈঠকের মাধ্যমে প্রচারণা শুরু করেছেন। ফলে আসনটি এখন রাজনৈতিকভাবে বেশ সরগরম।

দিরাই-শাল্লার তৃণমূল বিএনপি নেতাকর্মীরা বলছেন, দ্রুত প্রার্থী ঘোষণা করা হলে মাঠে নামা সহজ হবে। তাঁদের একাধিকজন বলেন, আমরা বিশ্বাস করি কেন্দ্র এ আসন থেকে বিএনপির প্রার্থীই দেবে, কারণ দিরাই-শাল্লার মানুষ এখনও বিএনপির আদর্শে আস্থাশীল।

স্থানীয়রা বলছেন, সুনামগঞ্জ-২ আসনে জয় নির্ভর করবে প্রার্থীর মাঠপর্যায়ের গ্রহণযোগ্যতা, হিন্দু ভোটের ভারসাম্য এবং দলের সাংগঠনিক প্রস্তুতির ওপর। স্থানীয় পর্যায়ে ঐক্য গড়ে তুলতে পারলে বিএনপির জয় অনেকটা সহজ হবে। অন্যথায় জামায়াত বা অন্যান্য শক্তিশালী প্রার্থী সুবিধা পেতে পারেন।

তৃণমূলের আশা ধানের শীষের প্রার্থী যত দ্রুত ঘোষণা হবে, মাঠ তত দ্রুত উত্তপ্ত হবে। আর এই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা তখনই হবে প্রকৃত অর্থে জমজমাট।

ট্যাগ:
জনপ্রিয়

দিরাই শাল্লায় বিএনপির প্রার্থী নিয়ে ধোঁয়াশা, কেন্দ্রের দিকে তাকিয়ে আছে তৃণমূল

প্রকাশের সময়: ০৩:১৪:১৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ৮ নভেম্বর ২০২৫

সন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি সারাদেশে ২৩৭টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করলেও সুনামগঞ্জ-২ (দিরাই-শাল্লা) আসনটি এখনো অনিশ্চয়তার তালিকায় রয়েছে। এ আসনে কে হচ্ছেন ধানের শীষের প্রার্থী তা নিয়ে এখন জোর আলোচনা চলছে তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সুনামগঞ্জ-২ আসনে মনোনয়নের দৌড়ে এগিয়ে ছিলেন, সাবেক সংসদ সদস্য নাসির উদ্দিন চৌধুরী, সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক উপদেষ্টা, সাবেক ছাত্রনেতা তাহির রায়হান চৌধুরী পাবেল, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, সাবেক সংসদ সদস্য মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরী রুমি।

নাসির উদ্দিন চৌধুরী দীর্ঘদিন দলের জন্য কাজ করেছেন। এলাকায় তাঁর জনপ্রিয়তা ও সাংগঠনিক প্রভাব যথেষ্ট বলেই মনে করেন তৃণমূল নেতাকর্মীরা। তবে সাম্প্রতিক সময়ে অসুস্থতার কারণে তিনি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে কিছুটা নিষ্ক্রিয় ছিলেন। অন্যদিকে তাহির রায়হান চৌধুরী পাবেল গত কয়েক বছর বিএনপির দুর্দিনে মাঠে থেকে দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন। দিরাই-শাল্লার সাধারণ মানুষের মধ্যে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে। অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরী রুমি ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।

দিরাই-শাল্লা আসনটি এক সময় আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা প্রয়াত সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ছিল। মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী প্রায় সব নির্বাচনে তিনি বিজয়ী হয়েছেন। তবে এর বাইরে ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট ক্ষমতায় থাকাকালে মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরী রুমি ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। একই বছরের জুনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে নাসির উদ্দিন চৌধুরী জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে জয়ী হন।প্রয়াত সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রী জয়া সেনগুপ্ত ২০১৭ সালের উপ-নির্বাচনে এবং ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পরপর দুইবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বর্তমানে তাঁর অনুপস্থিতিতে আসনটি আবারও রাজনৈতিকভাবে সরগরম হয়ে উঠেছে। এই আসনের ভোটারদের প্রায় অর্ধেকই হিন্দু সম্প্রদায়ের হওয়ায় প্রতি নির্বাচনে ভোটের সমীকরণ বেশ জটিল হয়ে ওঠে। ধর্মীয় ও সামাজিক ভারসাম্য, প্রার্থীর ব্যক্তিগত গ্রহণযোগ্যতা-সবকিছু মিলিয়ে এ আসনে জয় পেতে হলে দরকার সর্বস্তরের আস্থা অর্জন।

তৃণমূল বিএনপির অনেক নেতা মনে করেন, সমমনা দলের প্রার্থী দিলে এখানে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পাওয়া কঠিন হবে, তাই কেন্দ্রীয় বিএনপি নিজস্ব প্রার্থী দেবে বলেই তারা আশাবাদী।

এদিকে বিএনপির প্রার্থী ঘোষণায় বিলম্ব হওয়ায় সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে জামায়াতে ইসলামী। দলটির মনোনীত প্রার্থী সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শিশির মনির ইতোমধ্যে বিভিন্ন ইউনিয়নে মিছিল-মিটিং ও উঠান বৈঠকের মাধ্যমে প্রচারণা শুরু করেছেন। ফলে আসনটি এখন রাজনৈতিকভাবে বেশ সরগরম।

দিরাই-শাল্লার তৃণমূল বিএনপি নেতাকর্মীরা বলছেন, দ্রুত প্রার্থী ঘোষণা করা হলে মাঠে নামা সহজ হবে। তাঁদের একাধিকজন বলেন, আমরা বিশ্বাস করি কেন্দ্র এ আসন থেকে বিএনপির প্রার্থীই দেবে, কারণ দিরাই-শাল্লার মানুষ এখনও বিএনপির আদর্শে আস্থাশীল।

স্থানীয়রা বলছেন, সুনামগঞ্জ-২ আসনে জয় নির্ভর করবে প্রার্থীর মাঠপর্যায়ের গ্রহণযোগ্যতা, হিন্দু ভোটের ভারসাম্য এবং দলের সাংগঠনিক প্রস্তুতির ওপর। স্থানীয় পর্যায়ে ঐক্য গড়ে তুলতে পারলে বিএনপির জয় অনেকটা সহজ হবে। অন্যথায় জামায়াত বা অন্যান্য শক্তিশালী প্রার্থী সুবিধা পেতে পারেন।

তৃণমূলের আশা ধানের শীষের প্রার্থী যত দ্রুত ঘোষণা হবে, মাঠ তত দ্রুত উত্তপ্ত হবে। আর এই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা তখনই হবে প্রকৃত অর্থে জমজমাট।