ক্ষমতার প্রতি অতৃপ্ত আকাঙ্ক্ষা নিয়েই এগিয়ে গেছেন শেখ হাসিনা। দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামল সত্ত্বেও ক্ষমতার মোহ তাকে ছাড়েনি। প্রতিটি নির্বাচন ঘিরে ছিল তার নানা পরিকল্পনা ও কৌশল। ২০০৮ সালের নির্বাচনে এক-এগারোর শাসকদের সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে জয়লাভ করেন তিনি। তবে খালেদা জিয়ার আপোসহীন মনোভাবের কারণে ভিন্ন এক রাজনৈতিক ইতিহাস রচিত হতে পারত।
শেখ হাসিনা বরাবরই সুযোগসন্ধানী ছিলেন। ভারতের সমর্থন এবং জরুরি অবস্থা জমানার শাসকদের সঙ্গে আপস করে তিনি নিজ অবস্থান সুসংহত করেন। ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য বিরোধী দলকে দমন, বিডিআর হত্যাকাণ্ডের মতো রহস্যময় ঘটনা এবং বিচারব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণের কৌশলও ছিল তার শাসনামলের অংশ।
২০০১ সালের নির্বাচনে পরাজয়ের পর তিনি আরও প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে ওঠেন। বিএনপির দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে বিদেশ থেকে সমঝোতার মাধ্যমে ২০০৮ সালের নির্বাচনের পটভূমি তৈরি করেন। এ সময় সামরিক বাহিনী এবং কিছু চিহ্নিত ব্যবসায়ীর সহযোগিতায় রাজনীতির নতুন এক অধ্যায় শুরু হয়।
শেখ হাসিনার শাসনামলে বিরোধী দল এবং ভিন্নমতাবলম্বীদের ওপর দমন-পীড়ন চালানো হয়। তার শাসন ছিল গণতন্ত্রের লেবাসে কর্তৃত্ববাদী শাসনের একটি উদাহরণ। লন্ডনে তারেক রহমানের ওপর নজরদারি এবং বিরোধী দলের শক্তি খর্ব করার প্রচেষ্টা দেশকে বিভাজনের দিকে নিয়ে যায়।
বিপুল অর্থ বিদেশে পাচার, মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ, এবং বিচার বিভাগের ওপর কর্তৃত্বের মাধ্যমে তিনি নিজের শাসনকাল দীর্ঘায়িত করেন। তবে তার শাসনের শেষ পর্যায়ে জনগণের অসন্তোষ এবং আন্তর্জাতিক চাপ পরিস্থিতি বদলে দেয়।
জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থান তার ক্ষমতার পতনের সূচনা করে। ভারতের প্রতি অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা এবং বিকল্প পথ না খোলার কারণে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে। এমনকি ভারতও শেষ পর্যন্ত তার পাশে থাকেনি।
বর্তমানে ক্ষমতার ভারসাম্য পুনরুদ্ধারে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ সমঝোতার চেষ্টা চলছে। তরুণ নেতৃত্ব নতুন করে আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় মনোযোগ দিয়েছে। অন্যদিকে ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং সেনাবাহিনীর জেনারেলদের নেতৃত্বে একটি ভারসাম্যপূর্ণ শাসন প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
শেখ হাসিনার দীর্ঘ শাসনের শেষে আওয়ামী লীগ অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। তবে বিদেশ থেকে তরুণ নেতৃত্ব দলকে পুনর্গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানা গেছে। সামনের দিনগুলোতে দলটি কীভাবে পুনর্গঠিত হবে এবং বাংলাদেশ কোন পথে এগোবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
কালনী ভিউ ডেস্ক : 









