লন্ডন ১১:২৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৬ মার্চ ২০২৫, ২ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শুভ বড়দিন আজ

খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শুভ বড়দিন’ আজ বুধবার। এই ধর্মের প্রবর্তক যিশুখ্রিস্ট ২৫ ডিসেম্বর বেথলেহেমে জন্মগ্রহণ করেন। খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীরা এই দিনটিকে শুভ বড়দিন হিসেবে উদযাপন করে থাকেন। খ্রিস্টান স¤প্রদায়ের মানুষ বিশ্বাস করেন, সৃষ্টিকর্তার মহিমা প্রচারের মাধ্যমে মানবজাতিকে সত্য ও ন্যায়ের পথে পরিচালিত করতেই প্রভু যিশুর পৃথিবীতে আগমন ঘটেছিল।

ডেল আরভিন ও স্কট সানকিস্ট তাঁদের বিশদ গবেষণার ফসল হিস্ট্রি অব দ্য ওয়ার্ল্ড ক্রিশ্চিয়ান মুভমেন্ট গ্রন্থে লিখেছেন, ‘৩০০ খ্রিস্টাব্দের আগে যিশুখ্রিস্টের জন্মদিন বিষয়ে খ্রিস্টানদের মধ্যে কোনও ঐকমত্য ছিল না। অনেকে বসন্তের একটি দিনকে এই উদ্দেশ্যে মানতেন, অনেকে আবার ‘অদম্য সূর্যের দিন’ ২৫ ডিসেম্বর খ্রিস্টের জন্মদিন হিসেবে পালন করতেন। ক্রমশ অধিকাংশ খ্রিস্টান এই তারিখটিকেই মেনে নিলেন, তার ফলে খ্রিস্টীয় আচারে ‘সলস্টিস’ বা অয়নকাল—এর সূর্যবন্দনার সঙ্গে ‘স্যাটারনালিয়া’ নামক রোমান উৎসবের একটা মিলন ঘটল। হোমার স্মিথ তাঁর ম্যান অ্যান্ড হিজ গডস—এ লিখেছেন, ‘২৫ ডিসেম্বরের এই স্থানীয় উৎসব গ্রিক সৌর উৎসব ‘হেলিয়া’র সঙ্গে মিশে গেল, এই উৎসবের মধ্যে দিয়ে অ্যাটিস, ডায়োনিসাস, ওসিরিস প্রমুখ দেবতাকেও সম্মান জানাল, ‘পৃথিবীর আলো’ ও ‘পরিত্রাতা’ নামেও তাঁরা পূজিত হলেন।’ ডিসেম্বরের ২১—২২ তারিখে সূর্যের উত্তরায়ণ শুরু হয়, ঠান্ডায় জমে যাওয়া ইউরোপের মানুষের কাছে বছরের কঠিনতম সময়ের অবসান ঘটে, বাকি শীতটা পার করে দেওয়া যাবে এই স্বস্তি থেকেই শীতের উৎসব এসেছিল।

বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের খ্রিস্টান ধর্মানুসারীরাও যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও আচারাদি, আনন্দ—উৎসব এবং প্রার্থনার মাধ্যমে দিনটি উদযাপন করবে। বড়দিন উপলক্ষে আজ সরকারি ছুটি। অপরদিকে এ দিন অনেক খ্রিস্টান পরিবারে কেক তৈরি করা হবে, থাকবে বিশেষ খাবারের আয়োজন। খ্রিস্টান স¤প্রদায়ের অনেকেই আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার জন্য বড়দিনকে বেছে নেন।

খ্রিস্টধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, ঈশ্বরের অনুগ্রহে ও অলৌকিক ক্ষমতায়’ মেরি কুমারী হওয়া সত্ত্বেও গর্ভবতী হন। ঈশ্বরের দূত এর কথামতো শিশুটির নাম রাখা হয় যিশাস, যা বাংলায় ‘যিশু’। আজ থেকে প্রায় ২ হাজার বছর আগে জেরুজালেমের বেথলেহেম শহরের এক গোয়ালঘরে জন্ম হয়েছিল যিশুর। শিশুটি কিন্তু মোটেও সাধারণ শিশু ছিল না। ঈশ্বর যাকে পাঠানোর কথা বলেছিলেন মানবজাতির মুক্তির জন্য। যিশু নামের সেই শিশুটি বড় হয়ে পাপের শৃঙ্খলে আবদ্ধ মানুষকে মুক্তির বাণী শোনালেন। তিনি বললেন,‘ঘৃণা নয়, ভালোবাসো। ভালোবাসো সবাইকে, ভালোবাসো তোমার প্রতিবেশীকে, এমনকি তোমার শত্রুকেও। মানুষকে ক্ষমা করো, তাহলে তুমিও ক্ষমা পাবে। কেউ তোমার এক গালে চড় মারলে তার দিকে অপর গালটিও পেতে দাও।’ তিনি বললেন, ‘পাপীকে নয়, ঘৃণা করো পাপকে। গরিব—দুঃখীদের সাধ্যমতো সাহায্য করো, ঈশ্বরকে ভয় করো।’ যিশুর কথা শুনে অনেকে তাদের মন ফেরাল। রাষ্ট্রীয়, ধর্মীয় এবং সমাজনেতারা এসব সহ্য করতে পারলেন না। যিশুখ্রিস্টকে তারা তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবতে শুরু করলেন। তারা যিশুকে বন্দী করে ক্রুশে বিদ্ধ করে হত্যা করলেন। যিশুর মৃত্যুর অনেক বছর পর থেকে খ্রিস্টানরা এ দিনটিকে আনন্দ ও মুক্তির দিন হিসেবে পালন করতে শুরু করেন। ৪৪০ সালে পোপ এ দিবসকে স্বীকৃতি দেন। তবে উৎসবটি জনপ্রিয়তা পায় মধ্যযুগে। সে সময় এর নাম হয় ‘ক্রিসমাস ডে’।

যাকে কেন্দ্র করে এই বড়দিন, তিনি মানুষের দুঃখ—যন্ত্রণার ক্রুশ কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন, বলেছিলেন—“তোমরাই জগতের আলো… তোমার অন্তর্জ্যোতি প্রজ্বলিত কর, যাতে অপরে তোমার সৎ কর্মগুলি দেখতে পায় ও এইভাবে তোমার স্বর্গস্থ পিতাকে গৌরবান্বিত কর।” (ম্যাথিউ ৫, ১৪—১৬)। উৎসবের জোয়ারে ভেসে গিয়ে তাঁর দেখানো রাস্তা যেন আমরা ভুলে না যাই।

 

ট্যাগ:
জনপ্রিয়

শুভ বড়দিন আজ

প্রকাশের সময়: ০৫:৫৬:১৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪

খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শুভ বড়দিন’ আজ বুধবার। এই ধর্মের প্রবর্তক যিশুখ্রিস্ট ২৫ ডিসেম্বর বেথলেহেমে জন্মগ্রহণ করেন। খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীরা এই দিনটিকে শুভ বড়দিন হিসেবে উদযাপন করে থাকেন। খ্রিস্টান স¤প্রদায়ের মানুষ বিশ্বাস করেন, সৃষ্টিকর্তার মহিমা প্রচারের মাধ্যমে মানবজাতিকে সত্য ও ন্যায়ের পথে পরিচালিত করতেই প্রভু যিশুর পৃথিবীতে আগমন ঘটেছিল।

ডেল আরভিন ও স্কট সানকিস্ট তাঁদের বিশদ গবেষণার ফসল হিস্ট্রি অব দ্য ওয়ার্ল্ড ক্রিশ্চিয়ান মুভমেন্ট গ্রন্থে লিখেছেন, ‘৩০০ খ্রিস্টাব্দের আগে যিশুখ্রিস্টের জন্মদিন বিষয়ে খ্রিস্টানদের মধ্যে কোনও ঐকমত্য ছিল না। অনেকে বসন্তের একটি দিনকে এই উদ্দেশ্যে মানতেন, অনেকে আবার ‘অদম্য সূর্যের দিন’ ২৫ ডিসেম্বর খ্রিস্টের জন্মদিন হিসেবে পালন করতেন। ক্রমশ অধিকাংশ খ্রিস্টান এই তারিখটিকেই মেনে নিলেন, তার ফলে খ্রিস্টীয় আচারে ‘সলস্টিস’ বা অয়নকাল—এর সূর্যবন্দনার সঙ্গে ‘স্যাটারনালিয়া’ নামক রোমান উৎসবের একটা মিলন ঘটল। হোমার স্মিথ তাঁর ম্যান অ্যান্ড হিজ গডস—এ লিখেছেন, ‘২৫ ডিসেম্বরের এই স্থানীয় উৎসব গ্রিক সৌর উৎসব ‘হেলিয়া’র সঙ্গে মিশে গেল, এই উৎসবের মধ্যে দিয়ে অ্যাটিস, ডায়োনিসাস, ওসিরিস প্রমুখ দেবতাকেও সম্মান জানাল, ‘পৃথিবীর আলো’ ও ‘পরিত্রাতা’ নামেও তাঁরা পূজিত হলেন।’ ডিসেম্বরের ২১—২২ তারিখে সূর্যের উত্তরায়ণ শুরু হয়, ঠান্ডায় জমে যাওয়া ইউরোপের মানুষের কাছে বছরের কঠিনতম সময়ের অবসান ঘটে, বাকি শীতটা পার করে দেওয়া যাবে এই স্বস্তি থেকেই শীতের উৎসব এসেছিল।

বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের খ্রিস্টান ধর্মানুসারীরাও যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও আচারাদি, আনন্দ—উৎসব এবং প্রার্থনার মাধ্যমে দিনটি উদযাপন করবে। বড়দিন উপলক্ষে আজ সরকারি ছুটি। অপরদিকে এ দিন অনেক খ্রিস্টান পরিবারে কেক তৈরি করা হবে, থাকবে বিশেষ খাবারের আয়োজন। খ্রিস্টান স¤প্রদায়ের অনেকেই আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার জন্য বড়দিনকে বেছে নেন।

খ্রিস্টধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, ঈশ্বরের অনুগ্রহে ও অলৌকিক ক্ষমতায়’ মেরি কুমারী হওয়া সত্ত্বেও গর্ভবতী হন। ঈশ্বরের দূত এর কথামতো শিশুটির নাম রাখা হয় যিশাস, যা বাংলায় ‘যিশু’। আজ থেকে প্রায় ২ হাজার বছর আগে জেরুজালেমের বেথলেহেম শহরের এক গোয়ালঘরে জন্ম হয়েছিল যিশুর। শিশুটি কিন্তু মোটেও সাধারণ শিশু ছিল না। ঈশ্বর যাকে পাঠানোর কথা বলেছিলেন মানবজাতির মুক্তির জন্য। যিশু নামের সেই শিশুটি বড় হয়ে পাপের শৃঙ্খলে আবদ্ধ মানুষকে মুক্তির বাণী শোনালেন। তিনি বললেন,‘ঘৃণা নয়, ভালোবাসো। ভালোবাসো সবাইকে, ভালোবাসো তোমার প্রতিবেশীকে, এমনকি তোমার শত্রুকেও। মানুষকে ক্ষমা করো, তাহলে তুমিও ক্ষমা পাবে। কেউ তোমার এক গালে চড় মারলে তার দিকে অপর গালটিও পেতে দাও।’ তিনি বললেন, ‘পাপীকে নয়, ঘৃণা করো পাপকে। গরিব—দুঃখীদের সাধ্যমতো সাহায্য করো, ঈশ্বরকে ভয় করো।’ যিশুর কথা শুনে অনেকে তাদের মন ফেরাল। রাষ্ট্রীয়, ধর্মীয় এবং সমাজনেতারা এসব সহ্য করতে পারলেন না। যিশুখ্রিস্টকে তারা তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবতে শুরু করলেন। তারা যিশুকে বন্দী করে ক্রুশে বিদ্ধ করে হত্যা করলেন। যিশুর মৃত্যুর অনেক বছর পর থেকে খ্রিস্টানরা এ দিনটিকে আনন্দ ও মুক্তির দিন হিসেবে পালন করতে শুরু করেন। ৪৪০ সালে পোপ এ দিবসকে স্বীকৃতি দেন। তবে উৎসবটি জনপ্রিয়তা পায় মধ্যযুগে। সে সময় এর নাম হয় ‘ক্রিসমাস ডে’।

যাকে কেন্দ্র করে এই বড়দিন, তিনি মানুষের দুঃখ—যন্ত্রণার ক্রুশ কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন, বলেছিলেন—“তোমরাই জগতের আলো… তোমার অন্তর্জ্যোতি প্রজ্বলিত কর, যাতে অপরে তোমার সৎ কর্মগুলি দেখতে পায় ও এইভাবে তোমার স্বর্গস্থ পিতাকে গৌরবান্বিত কর।” (ম্যাথিউ ৫, ১৪—১৬)। উৎসবের জোয়ারে ভেসে গিয়ে তাঁর দেখানো রাস্তা যেন আমরা ভুলে না যাই।