পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রস্তুতি নিচ্ছে জামায়াতে ইসলামী। শুধু ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নয়, আওয়ামী লীগবিরোধী অন্যান্য দলগুলোকে নিয়ে বৃহত্তর জোট গঠনের চেষ্টা চালাচ্ছে দলটি। সংসদ নির্বাচন এবং স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের নির্বাচনের জন্য প্রার্থী নির্ধারণ করা হচ্ছে। সংস্কারের কথা বললেও দলটি দ্রুততম সময়ের মধ্যেই নির্বাচন চায়।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের ফলে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সখ্য কমে যায়। দুই দলের নেতাকর্মীরা একে অপরের কঠোর সমালোচনায় সরব। জামায়াতকে একাত্তরের ভূমিকা ও অর্থনৈতিক দখলদারিত্বের জন্য অভিযুক্ত করছে বিএনপি নেতারা, অপরদিকে বিএনপির বিভিন্ন কর্মকাণ্ড নিয়ে সমালোচনায় মুখর জামায়াত।
বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিএনপি ও জামায়াতকে আগামী নির্বাচনের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখা হচ্ছে। তবে সময়ের সঙ্গে পরিস্থিতির পরিবর্তন হতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। নির্বাচনের সময় ও প্রেক্ষাপট নির্ধারণ করবে আওয়ামী লীগবিরোধী দলগুলোর সম্পর্ক কেমন হবে।
জামায়াতের প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া
জামায়াত নেতারা জানিয়েছেন, নির্বাচনে ৩০০ আসনে দলীয়ভাবে কিংবা তাদের নেতৃত্বাধীন জোটের প্রার্থী দিতে চায় দলটি। এই লক্ষ্যে দেশব্যাপী কর্মী সম্মেলন, সভা-সমাবেশের মাধ্যমে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে জামায়াত।
সম্প্রতি ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, জামালপুর, ফরিদপুর, কিশোরগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলায় সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম স্থানীয়ভাবে ঘোষণা করা হয়েছে। দলীয়ভাবে প্রার্থীদের এখন থেকেই প্রচার কার্যক্রম চালানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার জানিয়েছেন, সাংগঠনিকভাবে স্থানীয় পর্যায়ে প্রার্থী নির্ধারণ করা হচ্ছে, তবে কেন্দ্রীয়ভাবে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। নির্বাচনের সময় ও বাস্তবতা বিবেচনায় চূড়ান্ত তালিকা নির্ধারণ করা হবে।
বৃহত্তর জোট গঠনের প্রচেষ্টা
বিএনপির সঙ্গে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা বজায় রাখার পাশাপাশি জামায়াত ইসলামী অন্যান্য দলগুলোর সঙ্গেও ঐক্য গড়ে তোলার চেষ্টা করছে। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীমের সঙ্গে জামায়াত আমিরের সাক্ষাৎ এবং একাধিক ইসলামী দলের সঙ্গে সংলাপ এই প্রচেষ্টার অংশ। পাশাপাশি বিএনপির সঙ্গেও জামায়াতের যোগাযোগ রয়েছে বলে দলটির নেতারা ইঙ্গিত দিয়েছেন।
জামায়াতের নেতারা জানিয়েছেন, কেবল ধর্মভিত্তিক দল নয়, আওয়ামী লীগবিরোধী অন্যান্য রাজনৈতিক শক্তিকেও একত্রিত করার চেষ্টা চলছে। ‘ইসলামপন্থিদের উত্থান’ হিসেবে পরিচিতি এড়াতে জামায়াত কৌশলগত জোট গঠনের পরিকল্পনা করছে।
নির্বাচন ও জামায়াতের অবস্থান
জামায়াতের শীর্ষ নেতারা সংস্কারের জন্য সময় দিলেও চলতি বছরেই নির্বাচন চায় দলটি। সেক্রেটারি জেনারেলসহ শীর্ষ নেতারা একাধিকবার বলেছেন, দীর্ঘদিন নির্বাচন স্থগিত রাখা ঠিক হবে না। আগামী ডিসেম্বরে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে তা মেনে নিতে প্রস্তুত জামায়াত।
বিএনপি আগামী বছরের মধ্যেই নির্বাচন চায় বলে জানিয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টাও চলতি বছরের শেষ দিকে অথবা আগামী বছরের মাঝামাঝি নির্বাচন অনুষ্ঠানের ইঙ্গিত দিয়েছেন। জামায়াতের পক্ষ থেকেও নির্বাচন প্রক্রিয়া এ বছরেই শুরু হওয়ার পক্ষে মত দেওয়া হয়েছে।
নতুন রাজনৈতিক দল গঠন ও জামায়াতের পরিকল্পনা
জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হওয়ার পর দলটি নতুন নামে রাজনীতি করার পরিকল্পনা করে। ২০২২ সালে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি (বিডিপি) নামে একটি দল গঠন করা হয়, যা জামায়াতের বিকল্প রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করতে পারে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। সম্প্রতি আদালতের রায়ে দলটি নিবন্ধন পেয়েছে।
জামায়াতের একজন শীর্ষ নেতা জানিয়েছেন, বিডিপির মাধ্যমে নির্বাচনে সুবিধা নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। প্রয়োজনে বিডিপি থেকে ‘স্বতন্ত্র প্রার্থী’ দেওয়া হতে পারে। তবে বিডিপির নেতারা দাবি করেছেন, তারা স্বাধীনভাবে রাজনৈতিক কার্যক্রম চালাবে।
জামায়াতের নির্বাচনী পরিকল্পনা এবং বৃহত্তর জোট গঠনের প্রচেষ্টা আগামী দিনে রাজনৈতিক সমীকরণে নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। নির্বাচনের সময় ও প্রেক্ষাপটের ওপর নির্ভর করবে, জামায়াতের এই কৌশল কতটা সফল হবে।