চব্বিশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকেই তরুণদের নেতৃত্বে নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ নিয়ে জল্পনা-কল্পনা চলছিল। অবশেষে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নামে আত্মপ্রকাশ করেছে নতুন এই দল, যা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে সৃষ্টি হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
গত শুক্রবার জুলাই অভ্যুত্থানের সামনের সারির নেতাদের নেতৃত্বে গঠিত দলটির আহ্বায়ক হয়েছেন মো. নাহিদ ইসলাম, সদস্যসচিব হয়েছেন আখতার হোসেন। এ ছাড়া হাসনাত আবদুল্লাহ, সারজিস আলমসহ আন্দোলনের অন্যান্য নেতারাও রয়েছেন দলে।
নতুন দলকে স্বাগত জানালেও তাদের রাজনৈতিক দর্শন ও ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ ধারণা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের নেতারা। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ প্রশ্ন তুলেছেন, “আমাদের বর্তমান রিপাবলিক কি অসুস্থ হয়ে গেছে?” তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, গণপরিষদ নির্বাচন ও সেকেন্ড রিপাবলিকের ধারণা রাষ্ট্রব্যবস্থাকে দীর্ঘায়িত ও অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার দিকে নিয়ে যেতে পারে।
এনসিপির আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে বিএনপির প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ও যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি। রিজভী মন্তব্য করেন, “তাদের বক্তব্যে রাষ্ট্র সম্পর্কে কোনো স্পষ্ট রাজনৈতিক দর্শন পাইনি।”
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না নতুন দলকে ‘খুশির খবর’ হিসেবে উল্লেখ করলেও দলের অভিজ্ঞতার অভাবকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন। গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক দলটির ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে বলেন, “সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা থাকলেও জনগণের আস্থা অর্জন করতে না পারলে তাদের জন্য চ্যালেঞ্জ কঠিন হবে।”
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স মনে করেন, “গণ-অভ্যুত্থানের চেতনাকে ধারণ করে দলটি ইতিবাচক রাজনীতি করলে তা দেশের জন্য ভালো হবে। তবে এখন পর্যন্ত দেশ ও জনগণের স্বার্থে তাদের কার্যক্রম স্পষ্ট নয়।”
নতুন রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে এনসিপির আত্মপ্রকাশ বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে, তবে তাদের আদর্শ ও কার্যক্রম কীভাবে পরিচালিত হবে, তা নিয়ে সংশয় ও চ্যালেঞ্জের কথাও বলছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।