লন্ডন ০৪:৩৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৬ মার্চ ২০২৫, ২ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শাল্লায় জমি দখল নিয়ে সংঘর্ষ, সেনাবাহিনীর পরিদর্শনেও উত্তেজনা কমেনি

সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার শ্রীহাইলসহ আশপাশের পাঁচটি গ্রামে টানা পাঁচদিন ধরে উত্তেজনা বিরাজ করছে। জমি দখল নিয়ে দুইপক্ষের দ্বন্দ্বের ফলে এলাকায় দাঙ্গা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দাঙ্গা পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে এবং সেনাবাহিনী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। তবে এলাকাবাসীর দাবি, পরিস্থিতি এখনও উদ্বেগজনক। শাল্লা থানার ওসি জানিয়েছেন, প্রত্যন্ত এলাকা হওয়ায় পুলিশের জন্য পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

জমি দখল নিয়ে দীর্ঘদিনের বিরোধ

শ্রীহাইল গ্রামের পাশের বেড়া মোহনা হাওরের ৩৮৩ একর খাস জমি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আফজাল মিয়া ও জুবায়ের আহমদ ডালিমের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে। এই বিরোধের জেরে গত কয়েক দশকে ১৭ জন নিহত হয়েছেন। ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের ভাই ও শাল্লা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মাহমুদ চৌধুরী (আল আমিন চৌধুরী) নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে কিছুদিন দুইপক্ষের মধ্যে উত্তেজনা কমেছিল। তবে সম্প্রতি পুনরায় সংঘর্ষ শুরু হয়েছে।

দুইপক্ষের হামলা-পাল্টা হামলা

গেল ২৬ ফেব্রুয়ারি জুবায়ের আহমদ ডালিমের পক্ষের লোকজন আফজাল মিয়ার বাড়িতে হামলা চালিয়ে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে। এতে পাঁচটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এর প্রতিক্রিয়ায় আফজাল মিয়ার পক্ষ থেকে চাঁন মিয়া বাদী হয়ে ১১৬ জনকে আসামি করে থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পরপরই দুইপক্ষের মধ্যে উত্তেজনা চরমে ওঠে। এক পর্যায়ে আফজাল মিয়ার পক্ষ ডালিমের পক্ষের বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও লুটপাট করে।

একে অপরকে রাজনৈতিক পরিচয়ে দোষারোপ

জুবায়ের আহমদ ডালিম দাবি করেন, আফজাল মিয়া ও তার সহযোগীরা ৩৮৩ একর খাস জমি দখল করে রেখেছেন এবং তারা অন্যায়ভাবে এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করছেন। অপরদিকে, আফজাল মিয়ার পক্ষের চাঁন মিয়া বলেন, সরকারই খাস জমির মালিক, তাই বিরোধী পক্ষের বাধা দেওয়ার অধিকার নেই। দুইপক্ষই একে অপরকে রাজনৈতিকভাবে আক্রমণ করছে এবং নিজেদের রাজনৈতিক পরিচয় পরিবর্তন করে নিজেদের সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করছে।

শাল্লা থানার ওসি শফিকুল ইসলাম জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ সক্রিয় রয়েছে। সেনাবাহিনীও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। পাঁচটি গ্রামে দুইপক্ষের আধিপত্য বিস্তারের দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিনের, এবং এর ফলে অনেক প্রাণহানি ঘটেছে। বর্তমানে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে, তবে পরিস্থিতি এখনও উদ্বেগজনক।

প্রশাসন পরিস্থিতি শান্ত করতে চেষ্টা চালিয়ে গেলেও স্থানীয় বাসিন্দারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে সংঘাত আরও দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।

জনপ্রিয়

শাল্লায় জমি দখল নিয়ে সংঘর্ষ, সেনাবাহিনীর পরিদর্শনেও উত্তেজনা কমেনি

প্রকাশের সময়: ০৯:৪৫:২৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ মার্চ ২০২৫

সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার শ্রীহাইলসহ আশপাশের পাঁচটি গ্রামে টানা পাঁচদিন ধরে উত্তেজনা বিরাজ করছে। জমি দখল নিয়ে দুইপক্ষের দ্বন্দ্বের ফলে এলাকায় দাঙ্গা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দাঙ্গা পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে এবং সেনাবাহিনী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। তবে এলাকাবাসীর দাবি, পরিস্থিতি এখনও উদ্বেগজনক। শাল্লা থানার ওসি জানিয়েছেন, প্রত্যন্ত এলাকা হওয়ায় পুলিশের জন্য পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

জমি দখল নিয়ে দীর্ঘদিনের বিরোধ

শ্রীহাইল গ্রামের পাশের বেড়া মোহনা হাওরের ৩৮৩ একর খাস জমি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আফজাল মিয়া ও জুবায়ের আহমদ ডালিমের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে। এই বিরোধের জেরে গত কয়েক দশকে ১৭ জন নিহত হয়েছেন। ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের ভাই ও শাল্লা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মাহমুদ চৌধুরী (আল আমিন চৌধুরী) নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে কিছুদিন দুইপক্ষের মধ্যে উত্তেজনা কমেছিল। তবে সম্প্রতি পুনরায় সংঘর্ষ শুরু হয়েছে।

দুইপক্ষের হামলা-পাল্টা হামলা

গেল ২৬ ফেব্রুয়ারি জুবায়ের আহমদ ডালিমের পক্ষের লোকজন আফজাল মিয়ার বাড়িতে হামলা চালিয়ে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে। এতে পাঁচটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এর প্রতিক্রিয়ায় আফজাল মিয়ার পক্ষ থেকে চাঁন মিয়া বাদী হয়ে ১১৬ জনকে আসামি করে থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পরপরই দুইপক্ষের মধ্যে উত্তেজনা চরমে ওঠে। এক পর্যায়ে আফজাল মিয়ার পক্ষ ডালিমের পক্ষের বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও লুটপাট করে।

একে অপরকে রাজনৈতিক পরিচয়ে দোষারোপ

জুবায়ের আহমদ ডালিম দাবি করেন, আফজাল মিয়া ও তার সহযোগীরা ৩৮৩ একর খাস জমি দখল করে রেখেছেন এবং তারা অন্যায়ভাবে এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করছেন। অপরদিকে, আফজাল মিয়ার পক্ষের চাঁন মিয়া বলেন, সরকারই খাস জমির মালিক, তাই বিরোধী পক্ষের বাধা দেওয়ার অধিকার নেই। দুইপক্ষই একে অপরকে রাজনৈতিকভাবে আক্রমণ করছে এবং নিজেদের রাজনৈতিক পরিচয় পরিবর্তন করে নিজেদের সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করছে।

শাল্লা থানার ওসি শফিকুল ইসলাম জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ সক্রিয় রয়েছে। সেনাবাহিনীও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। পাঁচটি গ্রামে দুইপক্ষের আধিপত্য বিস্তারের দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিনের, এবং এর ফলে অনেক প্রাণহানি ঘটেছে। বর্তমানে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে, তবে পরিস্থিতি এখনও উদ্বেগজনক।

প্রশাসন পরিস্থিতি শান্ত করতে চেষ্টা চালিয়ে গেলেও স্থানীয় বাসিন্দারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে সংঘাত আরও দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।