পরিবারের অভাব মোছার আশায় একবার ইউরোপে পাড়ি জমালে জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু হবে—এমন স্বপ্ন নিয়েই অনেকের মতো লিবিয়ার পথে পাড়ি জমিয়েছিলেন মল্লিক জাকির আহমদ (৩০)। ইউরোপের ইতালিতে পৌঁছানোর পর সেখানে দুই বছর কাজ করে পরিবারের জন্য আর্থিক স্বচ্ছলতা নিশ্চিত করেছিলেন তিনি। তবে আকস্মিক হার্ট অ্যাটাক তাঁর সেই স্বপ্নকে পরিণত করল করুণ পরিণতিতে।
জাকিরের বাড়ি সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার ইনাতনগর গ্রামে। রোববার সন্ধ্যায় ইতালি থেকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাঁর মরদেহ এসে পৌঁছালে স্বজনদের চোখে নামে অশ্রুধারা। মধ্যরাতে মরদেহ ইনাতনগর গ্রামে পৌঁছানোর পর বাড়ির পরিবেশ ভেঙে পড়ে শোকে। সোমবার জানাজার পর পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে চিরসমাহিত করা হয়।
জাকিরের পরিবার সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালের ১৭ অক্টোবর তিনি স্থানীয় এক দালালের মাধ্যমে লিবিয়া পাড়ি জমান। ৮ লাখ টাকার চুক্তিতে লিবিয়া যাওয়ার পর আরও ১২ লাখ টাকা দিতে বাধ্য হন ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেওয়ার জন্য। সাত মাস লিবিয়ায় অপেক্ষার পর দালাল চক্রের নানা জটিলতার মধ্যে পড়ে অনেক কষ্টে ইতালির মিলানে পৌঁছান। সেখানে দুই বছর কাজ করে তিনি পরিবারের আর্থিক অবস্থার উন্নতি করেছিলেন।
গত ৮ ডিসেম্বর হার্ট অ্যাটাকে আকস্মিকভাবে মৃত্যুবরণ করেন জাকির। তাঁর মৃত্যুতে পরিবারের সবাই বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন। তাঁর বাবা মল্লিক রফু মিয়া বলেন, “সংসারের অভাব মোছার জন্য ছেলেকে বিদেশ পাঠিয়েছিলাম। জায়গা-জমি বিক্রি করে ২০ লাখ টাকা খরচ করেও শেষ পর্যন্ত কিছুই রইল না। সব শেষ হয়ে গেল।”
মা শিবলি বেগম শোক সামলাতে না পেরে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। ছোট ভাই মল্লিক আলমগীর বলেন, “ভাইয়া আমাদের সবার বড় ছিলেন। তাঁকে হারিয়ে আমরা অসহায় হয়ে পড়েছি। এলাকাবাসীর সহায়তায় মরদেহ দেশে আনা সম্ভব হয়েছে।”
সাবেক পৌর কাউন্সিলর জিতু মিয়া জানান, “মল্লিক জাকির পরিবারের জন্য স্বচ্ছলতা ফেরাতে বিদেশ গিয়েছিলেন। তাঁর অকাল মৃত্যু এলাকাজুড়ে শোকের ছায়া ফেলেছে।”
জীবনের স্বপ্ন পূরণ করতে গিয়ে মৃত্যু যে এমন নির্মম বাস্তবতা নিয়ে আসতে পারে, মল্লিক জাকিরের করুণ পরিণতি তার একটি উদাহরণ হয়ে রইল।