সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার কুশিয়ারা নদী থেকে চলছে বালু উত্তোলনের উৎসব। উন্নয়ন কাজের অজুহাতে নদীতে ড্রেজার বসিয়ে প্রকাশ্যে চলছে এই কাজ। অভিযোগ রয়েছে, প্রভাবশালী একটি চক্র অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে তা বিক্রি করে অর্থ লুট করছে।
এদিকে, দিন-রাত এই বালু উত্তোলনের কারণে ফসল রক্ষা বাঁধ, ফসলি জমি এবং আশপাশের ঘরবাড়ি পড়েছে হুমকির মুখে। পাশাপাশি, দেড়শ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত রানীগঞ্জ সেতুও ঝুঁকিতে রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, একটি জব্দকৃত বালুভর্তি নৌকা স্থানীয় ইউপি সদস্যের জিম্মায় রাখা হলেও, সেটি রাতের অন্ধকারে গায়েব হয়ে যায়। এ নিয়ে এলাকাজুড়ে চলছে গুঞ্জন। জানা যায়, সোমবার বিকেলে স্থানীয়দের সহায়তায় রানীগঞ্জ ইউনিয়নের বাগময়না গ্রামে কুশিয়ারা নদী থেকে অবৈধভাবে উত্তোলিত বালুভর্তি নৌকাটি জব্দ করেন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা সেলিম মিয়া। কিন্তু মঙ্গলবার সকালে সেই নৌকাটি আর পাওয়া যায়নি।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, প্রশাসনের সহযোগিতায় ইউপি সদস্য নৌকাটি ছেড়ে দিয়েছেন। তবে ভূমি সহকারী কর্মকর্তা সেলিম মিয়া জানিয়েছেন, বিষয়টি উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রিয়াদ বিন ইব্রাহিম ভূঞাকে জানানো হয়েছে। তিনি বলেন, ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জানা গেছে, রানীগঞ্জ ইউনিয়নের নারিকেলতলা এলাকায় নির্মাণাধীন “কৃষি ইনস্টিটিউট (এটিআই)” এর উন্নয়ন কাজের জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স একতা এন্টারপ্রাইজকে সরকার কুশিয়ারা নদী থেকে ৫৫ লাখ ঘনফুট বালু উত্তোলনের অনুমতি দেয়। কিন্তু উন্নয়ন কাজের নাম ভাঙিয়ে নির্ধারিত এলাকা ছাড়াও অন্যান্য স্থান থেকে অবাধে বালু উত্তোলন চলছে।
এতে রানীগঞ্জ সেতু হুমকির মুখে পড়েছে এবং আশপাশের গ্রামে নদী ভাঙনের ফলে বহু ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। অনেক কৃষক ফসলি জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসন বারবার অভিযোগ পাওয়ার পরও নীরব ভূমিকা পালন করছে।
স্থানীয় কৃষক মোতালিব মিয়া বলেন, “অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে আমরা অনেক সম্পদ হারিয়েছি। এবার আমাদের ফসল রক্ষা বাঁধ হুমকির মুখে। এভাবে চললে আমরা সবকিছু হারিয়ে ফেলবো।”
এ ব্যাপারে জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরকত উল্লাহ্ বলেন, “অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হবে। আমরা নিশ্চিত করব, নির্ধারিত এলাকা ও মেয়াদের মধ্যে থেকেই বালু উত্তোলন করা হচ্ছে কি না।”
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স একতা এন্টারপ্রাইজের মালিক শফিক মো. জাবেদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
এলাকাবাসীর দাবি, কুশিয়ারা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। না হলে এর প্রভাব শুধু নদীর তীরবর্তী এলাকার নয়, বরং বৃহত্তর অঞ্চলের পরিবেশ ও জীবিকা ধ্বংস করবে।