জামালগঞ্জে চলতি মৌসুমে বোরো রোপণ শেষ পর্যায়ে পৌঁছালেও হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ এখনও সম্পূর্ণ হয়নি। প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির শিথিল মনোভাবের কারণে কিছু প্রকল্পের কাজ অত্যন্ত ধীরগতিতে চলছে, যা হাওরের কৃষকদের মাঝে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। কারণ, যে কোনো একটি দুর্বল বাঁধ পুরো হাওরকে বিপদের মুখে ফেলতে পারে।
নীতিমালা অনুযায়ী, গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর বাঁধ নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করা হলেও দুই মাস পার হয়ে গেলেও অধিকাংশ বাঁধের ৬০% কাজও সম্পন্ন হয়নি বলে কৃষকদের দাবি। তবে উপজেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের দাবি, ৭০% কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে।
বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম ও অভিযোগ
যেসব বাঁধে কাজ হয়েছে, সেগুলোর কিছুতে নিম্নমানের কাজের অভিযোগ উঠেছে। কিছু স্থানে মাটির স্তর উপরে দিলেও ভেতরে ব্যবহার করা হয়েছে বালু, যা বৃষ্টি ও বন্যার পানির চাপে সহজেই ধসে পড়তে পারে।
এছাড়া প্রকল্পের সাইনবোর্ড নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। কৃষকদের অভিযোগ, পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলাম জনি ৫০০ টাকার পরিবর্তে প্রতিটি প্রকল্পের সাইনবোর্ড বাবদ ২০০০ টাকা করে নিয়েছেন, যা নিয়মবহির্ভূত। অনেক প্রকল্পেই সাইনবোর্ড দৃশ্যমান নেই, আর যেগুলো রয়েছে সেগুলোতে কমিটির সভাপতির নাম ও মোবাইল নম্বরে ভুল দেখা গেছে।
অর্থ বরাদ্দ ও কাজের অগ্রগতি
উপজেলার ৭টি হাওরের ৪০টি প্রকল্পের কিছু অংশে মাটির কাজ প্রায় শেষ হলেও অনেক প্রকল্পেই এখনো কাজ চলছে ধীরগতিতে। অর্থের অভাবের কারণে অনেক প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি ঋণ করে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
হালির হাওরের ২১নং প্রকল্পের সভাপতি রফিকুল ইসলাম তালুকদার জানান, ১৫ লাখ টাকা বরাদ্দ থাকলেও এখন পর্যন্ত মাত্র ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা পেয়েছেন। ফলে ঋণ করে কাজ চালিয়ে যেতে হচ্ছে। একই হাওরের ১৪নং প্রকল্পের সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন তালুকদার বলেন, মাটির নিচে বিভিন্ন গাছের গুঁড়ি থাকায় কাজ কঠিন হয়ে পড়েছে এবং দূর থেকে মাটি আনতে হচ্ছে। অর্থ বরাদ্দ পেলে দ্রুত কাজ শেষ করা সম্ভব হবে।
হাওরের কৃষকদের উদ্বেগ
পাগনার হাওরের বোগলাখালী ক্লোজারের গুরুত্বপূর্ণ কাজ বাকি থাকলেও হাতে সময় মাত্র ১৮ দিন। একই হাওরের ৩৪নং প্রকল্পে ১৮ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলেও কৃষকদের দাবি, এই বাঁধের জন্য এত টাকা প্রয়োজন নেই, যা সরকারের অর্থ অপচয়ের ইঙ্গিত দেয়।
স্থানীয় কৃষক আলী হোসেন বলেন, “প্রতি বছর বাঁধের কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ হয় না, ফলে আগাম বন্যায় ধান নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে।”
প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া
জামালগঞ্জ উপজেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলাম জনি জানান, “অধিকাংশ প্রকল্পে মাটির কাজ শেষ হয়েছে, তবে দুর্বাঘাস ও মাটির দুরমুজের কাজ লেবার দিয়ে করতে হয়, যা অর্থ বরাদ্দ না হওয়া পর্যন্ত ধীরগতিতে হবে। শিগগিরই দ্বিতীয় ধাপের বিল ছাড় করা হবে।”
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুশফিকীন নূর বলেন, “হাওরের বেড়িবাঁধের কাজ দ্রুত চলছে এবং ৭০% কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বিলের ব্যাপারে জেলা পর্যায়ে আলোচনা হয়েছে, আশা করি দ্রুত বরাদ্দ দেওয়া হবে।”