লন্ডন ০৭:৫৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২১ মে ২০২৫, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শাল্লার মাদারিয়া বাঁধে ফাটল, ঝুঁকিতে ছায়ার হাওর

সুনামগঞ্জের দাঁড়াইন নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ায় এবং নদীর দুই পাড় সংকুচিত হয়ে পড়ায় পাহাড়ি ঢলের পানি ধারণের ক্ষমতা ক্রমেই হারিয়ে ফেলছে নদীটি। নদীর পাড় ঘেঁষেই দাঁড়িয়ে থাকা মাদারিয়া বাঁধ এখন হুমকির মুখে। একসময় এই বাঁধ রক্ষায় এলাকাবাসীকে রাতদিন কাজ করতে হতো, মাইকিং করে সতর্কতা জারি করা হতো।

সম্প্রতি ছায়ার হাওরের অন্তর্গত মাদারিয়া বাঁধের গোড়ায় বড় ধরনের ফাটল দেখা দিয়েছে। নদীর পানি কমতে থাকায় ফাটল আরও বড় হচ্ছে। স্থানীয় কৃষকরা আশঙ্কা করছেন, বৃষ্টি হলে ফাটল ধসে বাঁধ ভেঙে যেতে পারে। বাঁধের পশ্চিম পাশে ৬০ ফুট গভীরতা থাকায় এবং পূর্বদিকেও একই অবস্থা হওয়ায় পরিস্থিতি আরও শঙ্কাজনক হয়ে উঠছে।

স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ, এখনই বাঁধের দুই পাশে নতুন করে বাঁশের আড় ও ফাটলের স্থানে মাটি ভরাট না করলে বাঁধের ওপর ভরসা করা যাবে না। অন্যদিকে, উদগল হাওর প্লাবিত হলে ছায়ার হাওরও রক্ষা করা সম্ভব হবে না। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ছায়ার হাওর রক্ষায় উদগলবিল হাওরে প্রায় কোটি টাকার বিকল্প বাঁধ নির্মাণ করত, তবে এবার দিরাই উপজেলার জয়পুর গ্রামের ক্লোজারে কোনো প্রকল্প বরাদ্দ দেওয়া হয়নি, যা হাওরকে আরও ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে।

পাউবো’র যুক্তি, প্রকল্পের ব্যয় কমানোর জন্যই জয়পুরে প্রকল্প বরাদ্দ দেওয়া হয়নি, এটি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত।

মাদারিয়া বাঁধের ৫৭ নম্বর পিআইসির সভাপতি আব্দুল আজিজ তালুকদার বলেন, “বাঁধটি ঝুঁকিপূর্ণ, সবাই তা জানে। পূর্বদিকে ফাটল দেখা দিয়েছে, কিন্তু আমার বরাদ্দ মাত্র ৪ লাখ ৭০ হাজার টাকা। এর মধ্যে আমি ২০০ মিটার বাঁধের কাজ করেছি, সুখলাইন গ্রামের বাঁধেও কাজ করেছি। এখন ফাটল বন্ধ করতে হলে আমাকে নিজের জমি বিক্রি করতে হবে! অথচ পূর্বে এই বাঁধের জন্য ২৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হতো।”

এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের শাখা কর্মকর্তা (এসও) রিপন আলী জানান, “বাঁধে ১ ফুট মাটি ধরা হয়েছে, দ্রুত পরিদর্শন করে প্রয়োজনে নতুন বাঁশের আড় ও ফাটল মেরামতের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পিয়াস চন্দ্র দাস জানান, “যদি বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ হয়, তবে টেকসই করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

তবে হাওর বাঁচাও আন্দোলনের উপজেলা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক তরুণ কান্তি দাস বলেন, “পাউবো বলছে, উপজেলায় প্রায় ৭০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে, কিন্তু আমাদের সংগঠনের তথ্য অনুযায়ী, মাত্র ৫০ শতাংশ কাজ হয়েছে। সময়মতো কাজ শেষ না হলে এবং মাদারিয়া বাঁধ যথাযথভাবে মেরামত না করা হলে যেকোনো দুর্ঘটনার দায় পানি উন্নয়ন বোর্ডকেই নিতে হবে।”

উল্লেখ্য, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ফসল রক্ষায় ৮৪ কিলোমিটার বাঁধ মেরামতের জন্য ১১৫টি পিআইসির আওতায় বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে প্রায় ২৫ কোটি টাকা।

ট্যাগ:

শাল্লার মাদারিয়া বাঁধে ফাটল, ঝুঁকিতে ছায়ার হাওর

প্রকাশের সময়: ০৬:২৯:৩১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

সুনামগঞ্জের দাঁড়াইন নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ায় এবং নদীর দুই পাড় সংকুচিত হয়ে পড়ায় পাহাড়ি ঢলের পানি ধারণের ক্ষমতা ক্রমেই হারিয়ে ফেলছে নদীটি। নদীর পাড় ঘেঁষেই দাঁড়িয়ে থাকা মাদারিয়া বাঁধ এখন হুমকির মুখে। একসময় এই বাঁধ রক্ষায় এলাকাবাসীকে রাতদিন কাজ করতে হতো, মাইকিং করে সতর্কতা জারি করা হতো।

সম্প্রতি ছায়ার হাওরের অন্তর্গত মাদারিয়া বাঁধের গোড়ায় বড় ধরনের ফাটল দেখা দিয়েছে। নদীর পানি কমতে থাকায় ফাটল আরও বড় হচ্ছে। স্থানীয় কৃষকরা আশঙ্কা করছেন, বৃষ্টি হলে ফাটল ধসে বাঁধ ভেঙে যেতে পারে। বাঁধের পশ্চিম পাশে ৬০ ফুট গভীরতা থাকায় এবং পূর্বদিকেও একই অবস্থা হওয়ায় পরিস্থিতি আরও শঙ্কাজনক হয়ে উঠছে।

স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ, এখনই বাঁধের দুই পাশে নতুন করে বাঁশের আড় ও ফাটলের স্থানে মাটি ভরাট না করলে বাঁধের ওপর ভরসা করা যাবে না। অন্যদিকে, উদগল হাওর প্লাবিত হলে ছায়ার হাওরও রক্ষা করা সম্ভব হবে না। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ছায়ার হাওর রক্ষায় উদগলবিল হাওরে প্রায় কোটি টাকার বিকল্প বাঁধ নির্মাণ করত, তবে এবার দিরাই উপজেলার জয়পুর গ্রামের ক্লোজারে কোনো প্রকল্প বরাদ্দ দেওয়া হয়নি, যা হাওরকে আরও ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে।

পাউবো’র যুক্তি, প্রকল্পের ব্যয় কমানোর জন্যই জয়পুরে প্রকল্প বরাদ্দ দেওয়া হয়নি, এটি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত।

মাদারিয়া বাঁধের ৫৭ নম্বর পিআইসির সভাপতি আব্দুল আজিজ তালুকদার বলেন, “বাঁধটি ঝুঁকিপূর্ণ, সবাই তা জানে। পূর্বদিকে ফাটল দেখা দিয়েছে, কিন্তু আমার বরাদ্দ মাত্র ৪ লাখ ৭০ হাজার টাকা। এর মধ্যে আমি ২০০ মিটার বাঁধের কাজ করেছি, সুখলাইন গ্রামের বাঁধেও কাজ করেছি। এখন ফাটল বন্ধ করতে হলে আমাকে নিজের জমি বিক্রি করতে হবে! অথচ পূর্বে এই বাঁধের জন্য ২৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হতো।”

এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের শাখা কর্মকর্তা (এসও) রিপন আলী জানান, “বাঁধে ১ ফুট মাটি ধরা হয়েছে, দ্রুত পরিদর্শন করে প্রয়োজনে নতুন বাঁশের আড় ও ফাটল মেরামতের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পিয়াস চন্দ্র দাস জানান, “যদি বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ হয়, তবে টেকসই করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

তবে হাওর বাঁচাও আন্দোলনের উপজেলা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক তরুণ কান্তি দাস বলেন, “পাউবো বলছে, উপজেলায় প্রায় ৭০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে, কিন্তু আমাদের সংগঠনের তথ্য অনুযায়ী, মাত্র ৫০ শতাংশ কাজ হয়েছে। সময়মতো কাজ শেষ না হলে এবং মাদারিয়া বাঁধ যথাযথভাবে মেরামত না করা হলে যেকোনো দুর্ঘটনার দায় পানি উন্নয়ন বোর্ডকেই নিতে হবে।”

উল্লেখ্য, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ফসল রক্ষায় ৮৪ কিলোমিটার বাঁধ মেরামতের জন্য ১১৫টি পিআইসির আওতায় বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে প্রায় ২৫ কোটি টাকা।