লন্ডন ০৮:৪১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২১ মে ২০২৫, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

যাদুকাটা বালুমহালের ইজারা: অনিয়ম ও বিতর্ক

  • কালনী ভিউ ডেস্ক :
  • প্রকাশের সময়: ০৭:১১:৩৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • ৫৬১

 

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার যাদুকাটা—১ ও যাদুকাটা—২ বালুমহালের ইজারা কার্যক্রম সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে আলোচিত ইস্যু হয়ে উঠেছে। স্থানীয়দের মতে, এই ইজারা লাভ করলে ‘শত কোটি টাকার মালিক’ হওয়া সম্ভব। ফলে এবার বড় ব্যবসায়ীদের মধ্যে বিনিয়োগের প্রতিযোগিতা চরমে পৌঁছেছে।

ইজারা প্রক্রিয়ায় অনিয়ম ও সিন্ডিকেটের অভিযোগ

যাদুকাটা বালুমহালের ইজারা প্রক্রিয়ায় দীর্ঘদিন ধরে সিন্ডিকেট ও অনিয়মের অভিযোগ উঠছে। স্থানীয়দের দাবি, সরকারের ন্যায্য রাজস্ব বঞ্চিত করে প্রভাবশালী মহল নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি করছে। গত বছর এই দুইটি বালুমহালের ইজারা মূল্য ছিল ভ্যাট-ট্যাক্সসহ ৪২ কোটি টাকা, যেখানে তার আগের বছর সরকার পেয়েছিল ৫৬ কোটি টাকা। এবছর চারটি বালুমহাল একসঙ্গে ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে তাহিরপুরের যাদুকাটা—১, যাদুকাটা—২ এবং ছাতক-দোয়ারা’র চেলা ও খাসিয়ামারা বালুমহাল।

১১৭ জনের দরপত্র সংগ্রহ ও বিশৃঙ্খলার অভিযোগ

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, এবার মোট ১১৭ জন ব্যবসায়ী দরপত্র কিনেছেন, যা অতীতের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। তবে সিডিউল কেনা নিয়ে নানা বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।

সোমবার দরপত্র সংগ্রহের সময় বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার এক ব্যবসায়ীর সিডিউল ছিনতাই ও তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত এক ভিডিওতে দেখা যায়, জাকির হোসেন ডালিম নামের ওই ব্যবসায়ীকে হেনস্থা করা হয়। পরবর্তীতে তদন্তে নির্দোষ প্রমাণিত হলে প্রশাসন তাকে মুক্তি দেয়।

রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা ও বিতর্কিত ব্যক্তিদের নাম

এ ঘটনায় স্থানীয় যুবদল নেতা কামরুল হাসান রাজুর ভাই সাজু, তাহিরপুর উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সুমন মিয়া, ধনাঢ্য ব্যবসায়ী মোস্তাক আহমদ ও নাছির মিয়ার নাম উঠে এসেছে। তবে তারা সকলেই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। পুলিশের দাবি, তারা অভিযোগের সত্যতা না পেয়ে ডালিমকে ছেড়ে দেয়।

ইজারা প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার দাবি

প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বৃহস্পতিবার দরপত্র গ্রহণ ও খোলার পর সবার সামনে মূল্য ঘোষণা করা হবে এবং দরপত্র কমিটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবে। তবে স্থানীয় সুশীল সমাজের দাবি, যাদুকাটা বালুমহাল থেকে অনিয়মের মাধ্যমে কয়েক হাজার কোটি টাকার সম্পদ লুটপাট হয়েছে। পরিবেশবাদীদের আশঙ্কা, অতিরিক্ত বালু উত্তোলনের ফলে নদীর পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলো হুমকির মুখে পড়ছে।

মানববন্ধন ও আইনি লড়াই

এর আগে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেও স্থানীয়রা প্রশাসন ও প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছেন। এক বাসিন্দা আদালতে রিট দায়ের করে অভিযোগ করেন, অনিয়মের ফলে নদীর পাড় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে বসতবাড়ি বিলীন হচ্ছে। তিনি প্রধান উপদেষ্টার কাছেও লিখিত অভিযোগ পাঠিয়েছেন।

উপসংহার

যাদুকাটা বালুমহালের ইজারা নিয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ ও প্রশাসনের মধ্যে টানাপোড়েন এখন তুঙ্গে। ভবিষ্যতে এই ইজারা প্রক্রিয়া কতটা স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতার মধ্যে থাকবে, তা নিয়ে স্থানীয় জনগণের মধ্যে উদ্বেগ বিরাজ করছে।

 

ট্যাগ:

যাদুকাটা বালুমহালের ইজারা: অনিয়ম ও বিতর্ক

প্রকাশের সময়: ০৭:১১:৩৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

 

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার যাদুকাটা—১ ও যাদুকাটা—২ বালুমহালের ইজারা কার্যক্রম সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে আলোচিত ইস্যু হয়ে উঠেছে। স্থানীয়দের মতে, এই ইজারা লাভ করলে ‘শত কোটি টাকার মালিক’ হওয়া সম্ভব। ফলে এবার বড় ব্যবসায়ীদের মধ্যে বিনিয়োগের প্রতিযোগিতা চরমে পৌঁছেছে।

ইজারা প্রক্রিয়ায় অনিয়ম ও সিন্ডিকেটের অভিযোগ

যাদুকাটা বালুমহালের ইজারা প্রক্রিয়ায় দীর্ঘদিন ধরে সিন্ডিকেট ও অনিয়মের অভিযোগ উঠছে। স্থানীয়দের দাবি, সরকারের ন্যায্য রাজস্ব বঞ্চিত করে প্রভাবশালী মহল নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি করছে। গত বছর এই দুইটি বালুমহালের ইজারা মূল্য ছিল ভ্যাট-ট্যাক্সসহ ৪২ কোটি টাকা, যেখানে তার আগের বছর সরকার পেয়েছিল ৫৬ কোটি টাকা। এবছর চারটি বালুমহাল একসঙ্গে ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে তাহিরপুরের যাদুকাটা—১, যাদুকাটা—২ এবং ছাতক-দোয়ারা’র চেলা ও খাসিয়ামারা বালুমহাল।

১১৭ জনের দরপত্র সংগ্রহ ও বিশৃঙ্খলার অভিযোগ

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, এবার মোট ১১৭ জন ব্যবসায়ী দরপত্র কিনেছেন, যা অতীতের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। তবে সিডিউল কেনা নিয়ে নানা বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।

সোমবার দরপত্র সংগ্রহের সময় বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার এক ব্যবসায়ীর সিডিউল ছিনতাই ও তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত এক ভিডিওতে দেখা যায়, জাকির হোসেন ডালিম নামের ওই ব্যবসায়ীকে হেনস্থা করা হয়। পরবর্তীতে তদন্তে নির্দোষ প্রমাণিত হলে প্রশাসন তাকে মুক্তি দেয়।

রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা ও বিতর্কিত ব্যক্তিদের নাম

এ ঘটনায় স্থানীয় যুবদল নেতা কামরুল হাসান রাজুর ভাই সাজু, তাহিরপুর উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সুমন মিয়া, ধনাঢ্য ব্যবসায়ী মোস্তাক আহমদ ও নাছির মিয়ার নাম উঠে এসেছে। তবে তারা সকলেই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। পুলিশের দাবি, তারা অভিযোগের সত্যতা না পেয়ে ডালিমকে ছেড়ে দেয়।

ইজারা প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার দাবি

প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বৃহস্পতিবার দরপত্র গ্রহণ ও খোলার পর সবার সামনে মূল্য ঘোষণা করা হবে এবং দরপত্র কমিটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবে। তবে স্থানীয় সুশীল সমাজের দাবি, যাদুকাটা বালুমহাল থেকে অনিয়মের মাধ্যমে কয়েক হাজার কোটি টাকার সম্পদ লুটপাট হয়েছে। পরিবেশবাদীদের আশঙ্কা, অতিরিক্ত বালু উত্তোলনের ফলে নদীর পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলো হুমকির মুখে পড়ছে।

মানববন্ধন ও আইনি লড়াই

এর আগে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেও স্থানীয়রা প্রশাসন ও প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছেন। এক বাসিন্দা আদালতে রিট দায়ের করে অভিযোগ করেন, অনিয়মের ফলে নদীর পাড় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে বসতবাড়ি বিলীন হচ্ছে। তিনি প্রধান উপদেষ্টার কাছেও লিখিত অভিযোগ পাঠিয়েছেন।

উপসংহার

যাদুকাটা বালুমহালের ইজারা নিয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ ও প্রশাসনের মধ্যে টানাপোড়েন এখন তুঙ্গে। ভবিষ্যতে এই ইজারা প্রক্রিয়া কতটা স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতার মধ্যে থাকবে, তা নিয়ে স্থানীয় জনগণের মধ্যে উদ্বেগ বিরাজ করছে।