সুনামগঞ্জের শাল্লায় প্রকৃত কৃষকদের মাধ্যমে হাওর রক্ষা বাঁধ (পিআইসি) গঠনের জন্য গণস্বাক্ষর সম্বলিত একটি স্মারকলিপি প্রধান উপদেষ্টার বরাবর প্রেরণের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম তারেক সুলতানের নিকট প্রদান করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) বিকালে শাল্লা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম তারেক সুলতানের অফিস কক্ষে প্রকৃত কৃষকদের একটি প্রতিনিধি দল এই স্মারকলিপি প্রদান করেন।
স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, “প্রধান উপদেষ্টা মহোদয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। দেশের সর্বক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়া, দুর্গম, ডুবো ও হাওর বেষ্ঠিত সুনামগঞ্জ জেলার শাল্লা উপজেলাটি আরো পশ্চাৎপদ। এখানকার লোকজনের একমাত্র উপজীব্য বোরো ফসল। উপজেলার অধিকাংশ লোক প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষক। বিগত ২০১৭ ইং সালের মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহে অতিমাত্রার পাহাড়ী ঢলে সৃষ্ট অকাল বন্যায় গোটা জেলা সহ আমাদের শাল্লা উপজেলার সমূহ বোরো ফসলী জমি পানিতে তলিয়ে গেলে লোকজন দিশেহারা হয়ে পড়ে। পরবর্তী বছর থেকে আমাদের এ হাওর অঞ্চলের একমাত্র বোরো ফসল রক্ষায় সরকার শত শত কোটি টাকা ব্যয়ে হাওরে প্রকৃত কৃষকদের মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করে ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণ/মেরামত শুরু করে। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে হাওরের এ ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মান/মেরামত কাজের বরাদ্দকৃত শত শত কোটি টাকা লোপাট হয়েছে। গত ৫ আগষ্টের গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর আমরা সাধারণ কৃষকদের মনে আশার সঞ্চার হয়েছিল এবার আমাদের ন্যায্য অধিকার বাস্তবায়িত হবে। কিন্তু এ ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণ/মেরামতে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পানি উন্নয়ন বোর্ডের জারীকৃত নীতিমালা অনুযায়ী উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার-কে সভাপতি করে একটি কাবিটা স্কীম প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন কমিটি অনুমোদিত হয়। যে কমিটি “প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি)” গঠনে সার্বিক ভাবে নিরপেক্ষ হয়ে কাজ করবে। কিন্তু আমাদের অত্যন্ত পিছিয়ে পড়া শাল্লায় উপজেলা কাবিটা স্কীম প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন কমিটি চলতি বছরে কোটি কোটি টাকার বিপরীতে হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের কাজে পলাতক ফ্যাসিস্ট সরকারের আওয়ামী দোসরদের পুনর্বাসনে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) অনুমোদন দেয়। শুধু তাই নয়, উক্ত কমিটি সরকারী নীতিমালা উপেক্ষা করে ঘুষ-বাণিজ্যের মাধ্যমে যাকে তাকে পিআইসির সভাপতি, সদস্য সচিব ও সদস্য নির্বাচিত করে। হাওরে ও বাঁধের পাশে জমি নেই এমন অনেক লোককে দেয়া হয়েছে পিআইসি। আবার এক এলাকার বাঁধে অন্য এলাকার লোকজনকেও করা হয়েছে পিআইসি’র সভাপতি। শুধু তাই নয়, নীতিমালায় উল্লেখ্য থাকা স্বত্ত্বেও কোনোরূপ গণশুনানী না করেই উপজেলা কাবিটা স্কীম প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন কমিটি যোগাযোগি মূলে দিয়েছে পিআইসি’র অনুমোদন। তাছাড়া এখনো পর্যন্ত উপজেলার সর্বমোট ১১৫টি পিআইসি’র মধ্যে দু’দফায় ১১১টি পিআইসির অন্যায় অনুমোদন দিলে ভুক্তভোগী কৃষকগণ লিখিত অভিযোগ করলেও করা হচ্ছে না কোনোরূপ তদন্ত। তাই হাওরের স্বার্থে ও হাওরের কৃষকদের কষ্টার্জিত একমাত্র বোরো ফসল অকাল বন্যা ও পাহাড়ী ঢলের কবল থেকে রক্ষাকল্পে অনতিবিলম্বে উপজেলা কাবিটা স্কীম প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন কমিটি সংশোধিত ভাবে গঠন করে প্রকৃত কৃষকদের মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করে সুন্দর ও স্বাবলিল ভাবে হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণ কাজ বাস্তবায়নে আপনার আশু হস্তক্ষেপ কামনা করি।”