লন্ডন ১০:১৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৬ মার্চ ২০২৫, ২ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মুক্তা মোর্শেদার অসহায় জীবন: দুই মেয়ের আত্মহত্যায় শোকের সাগরে মা

মাত্র দুই বছরের ব্যবধানে দুই মেয়েকে হারিয়ে দিশেহারা মুক্তা মোর্শেদা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তার বড় মেয়ে তাহসিন মেহজাবিন (২১) গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। এইচএসসি পাস করে ডিগ্রিতে ভর্তি হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল মেহজাবিন।

মেহজাবিনের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে তার সুনামগঞ্জের ষোলঘরের বাড়িতে শত শত মানুষ ভিড় জমায়। উপস্থিত সবার মনেই একটাই প্রশ্ন—কেন এমন করুণ পরিণতি বেছে নিলো মেহজাবিন?

তার মামাতো ভাই জোহায়েব নুর হামিম জানান, ঘটনার সময় তিনি কর্মস্থলে (ডাচ-বাংলা ব্যাংকের অফিসে) ছিলেন। বাড়ি থেকে ফোন পেয়ে জানতে পারেন, মেহজাবিন আত্মহত্যা করেছে। তিনি বলেন, “আমার ফুফাতো বোন ছিল সে। নিজেদের ঘরেই ফ্যানের সঙ্গে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে।”

এর আগে, ২০২৩ সালের ২ মার্চ শহরের মল্লিকপুর এলাকার আব্দুজ জহুর সেতু থেকে পড়ে সুরমা নদীতে ডুবে মারা যায় মুক্তার ছোট মেয়ে, স্কুলছাত্রী জেসমিন আক্তার তাজিন।

সুনামগঞ্জ সরকারি সতীশ চন্দ্র (এসসি) বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল তাজিন। তার মৃত্যুর পর মেহজাবিন বলেছিল, “আমার বোন আত্মহত্যা করেনি, অসাবধানতাবশত পা পিছলে নদীতে পড়ে গেছে।” তবে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সে ইচ্ছাকৃতভাবে নদীতে ঝাঁপ দিয়েছিল।

বিদ্যালয়ের মডেল টেস্ট পরীক্ষা শেষে দুই বান্ধবীকে সঙ্গে নিয়ে সেতুতে ঘুরতে গিয়েছিল তাজিন। একপর্যায়ে রেলিংয়ে উঠে হাঁটতে চায় সে। নিচে দাঁড়িয়ে থাকা এক বান্ধবী তার হাত ধরে রেখেছিল, কিন্তু হঠাৎ করেই হাত ছেড়ে নদীতে পড়ে যায়। পরে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা তার মরদেহ উদ্ধার করে।

মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টা ১৫ মিনিটে মেহজাবিনের আত্মহত্যার খবর পেয়ে পুলিশ মুক্তা মোর্শেদার বাড়িতে যায়। তবে পুলিশ পৌঁছানোর আগেই পরিবারের লোকজন ঝুলন্ত দেহ নিচে নামিয়ে ফেলেছিল। মেয়ের নিথর দেহ দেখে মুক্তা মোর্শেদা যেন বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন, কান্নার শক্তিও হারিয়ে ফেলেন তিনি।

সদর থানার ওসি মো. আবুল কালাম জানান, “ষোলঘরে এক তরুণীর আত্মহত্যার খবর পেয়েছি। কেন, কীভাবে মারা গেছে, তা তদন্ত করে বলা যাবে।”

মুক্তা মোর্শেদার জীবন বরাবরই সংগ্রামের। তার স্বামী রায়হানুর রহমান রায়হানের সঙ্গে ১৯ বছর আগে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। স্বামী পুনরায় বিয়ে করার পর ২০০৬ সালে তিনি দুই মেয়েকে নিয়ে বাবার বাড়িতে চলে আসেন। পরবর্তীতে তিনিও আরেকটি বিয়ে করেন এবং দ্বিতীয় স্বামীর সঙ্গে মেয়েদের নিয়েই থাকতেন।

মুক্তা মোর্শেদা সুনামগঞ্জ কালেক্টরেটে অফিস সহায়ক পদে চাকরি করতেন। তবে একতলা বাসার ছাদ থেকে পড়ে গিয়ে পা ভেঙে যাওয়ার পর থেকে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। এখন দুই মেয়েকে হারিয়ে তার জীবন যেন আরও দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।

ট্যাগ:
জনপ্রিয়

মুক্তা মোর্শেদার অসহায় জীবন: দুই মেয়ের আত্মহত্যায় শোকের সাগরে মা

প্রকাশের সময়: ০৮:১২:৫৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

মাত্র দুই বছরের ব্যবধানে দুই মেয়েকে হারিয়ে দিশেহারা মুক্তা মোর্শেদা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তার বড় মেয়ে তাহসিন মেহজাবিন (২১) গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। এইচএসসি পাস করে ডিগ্রিতে ভর্তি হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল মেহজাবিন।

মেহজাবিনের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে তার সুনামগঞ্জের ষোলঘরের বাড়িতে শত শত মানুষ ভিড় জমায়। উপস্থিত সবার মনেই একটাই প্রশ্ন—কেন এমন করুণ পরিণতি বেছে নিলো মেহজাবিন?

তার মামাতো ভাই জোহায়েব নুর হামিম জানান, ঘটনার সময় তিনি কর্মস্থলে (ডাচ-বাংলা ব্যাংকের অফিসে) ছিলেন। বাড়ি থেকে ফোন পেয়ে জানতে পারেন, মেহজাবিন আত্মহত্যা করেছে। তিনি বলেন, “আমার ফুফাতো বোন ছিল সে। নিজেদের ঘরেই ফ্যানের সঙ্গে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে।”

এর আগে, ২০২৩ সালের ২ মার্চ শহরের মল্লিকপুর এলাকার আব্দুজ জহুর সেতু থেকে পড়ে সুরমা নদীতে ডুবে মারা যায় মুক্তার ছোট মেয়ে, স্কুলছাত্রী জেসমিন আক্তার তাজিন।

সুনামগঞ্জ সরকারি সতীশ চন্দ্র (এসসি) বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল তাজিন। তার মৃত্যুর পর মেহজাবিন বলেছিল, “আমার বোন আত্মহত্যা করেনি, অসাবধানতাবশত পা পিছলে নদীতে পড়ে গেছে।” তবে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সে ইচ্ছাকৃতভাবে নদীতে ঝাঁপ দিয়েছিল।

বিদ্যালয়ের মডেল টেস্ট পরীক্ষা শেষে দুই বান্ধবীকে সঙ্গে নিয়ে সেতুতে ঘুরতে গিয়েছিল তাজিন। একপর্যায়ে রেলিংয়ে উঠে হাঁটতে চায় সে। নিচে দাঁড়িয়ে থাকা এক বান্ধবী তার হাত ধরে রেখেছিল, কিন্তু হঠাৎ করেই হাত ছেড়ে নদীতে পড়ে যায়। পরে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা তার মরদেহ উদ্ধার করে।

মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টা ১৫ মিনিটে মেহজাবিনের আত্মহত্যার খবর পেয়ে পুলিশ মুক্তা মোর্শেদার বাড়িতে যায়। তবে পুলিশ পৌঁছানোর আগেই পরিবারের লোকজন ঝুলন্ত দেহ নিচে নামিয়ে ফেলেছিল। মেয়ের নিথর দেহ দেখে মুক্তা মোর্শেদা যেন বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন, কান্নার শক্তিও হারিয়ে ফেলেন তিনি।

সদর থানার ওসি মো. আবুল কালাম জানান, “ষোলঘরে এক তরুণীর আত্মহত্যার খবর পেয়েছি। কেন, কীভাবে মারা গেছে, তা তদন্ত করে বলা যাবে।”

মুক্তা মোর্শেদার জীবন বরাবরই সংগ্রামের। তার স্বামী রায়হানুর রহমান রায়হানের সঙ্গে ১৯ বছর আগে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। স্বামী পুনরায় বিয়ে করার পর ২০০৬ সালে তিনি দুই মেয়েকে নিয়ে বাবার বাড়িতে চলে আসেন। পরবর্তীতে তিনিও আরেকটি বিয়ে করেন এবং দ্বিতীয় স্বামীর সঙ্গে মেয়েদের নিয়েই থাকতেন।

মুক্তা মোর্শেদা সুনামগঞ্জ কালেক্টরেটে অফিস সহায়ক পদে চাকরি করতেন। তবে একতলা বাসার ছাদ থেকে পড়ে গিয়ে পা ভেঙে যাওয়ার পর থেকে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। এখন দুই মেয়েকে হারিয়ে তার জীবন যেন আরও দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।