লন্ডন ০১:৩৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫, ২ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দিরাইয়ে বাঁধের কাজে ধীরগতি: সময়মতো কাজ শেষ নিয়ে শঙ্কা

সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার করিমপুর, তাড়ল ও জগদল ইউনিয়নের বিভিন্ন ফসল রক্ষা বাঁধ পরিদর্শনে অনিয়মের সত্যতা পাওয়া গেছে। কয়েকটি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) কাজ নামেমাত্র শুরু করেছেন, আবার কিছু বাঁধে নিম্নমানের কাজ হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় কৃষকরা। সরকারের নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে বাঁধের কাজ শেষ হবে কিনা, তা নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে।

**পিআইসির কাজে অনিয়ম ও ধীরগতি**
জগদল ইউনিয়নের চাপতির হাওরের ৮ নম্বর পিআইসিতে মাটির কাজ শুরু হয়নি। ক্লোজারের নিচে সামান্য মাটির স্তর দেখা গেলেও সংশ্লিষ্টদের কাউকে সেখানে পাওয়া যায়নি। ৭ নম্বর পিআইসিতেও একই ধরনের অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এলোমেলোভাবে মাটি ফেলা হলেও কোনো কমপেকশন (মাটি চাপ দিয়ে বসানো) করা হয়নি, ফলে কাজের গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। তাছাড়া, এ পিআইসির কোথাও কোনো সাইনবোর্ডও দেখা যায়নি।

৭ নম্বর পিআইসির সভাপতির সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, সাইনবোর্ড দিরাইয়ে রয়েছে, পরে এনে স্থাপন করা হবে। কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ২৩ জানুয়ারি কাজ শুরু হয়েছে এবং ২৬ ফেব্রুয়ারির মধ্যে শেষ হবে। তবে মাটির কাজ এখনো শেষ না হওয়ায় এত কম সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা সম্ভব হবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।

হুরামন্দিরা হাওরের ৬২ নম্বর পিআইসিতে মাটির কাজ মোটামুটি ভালো হলেও কোথাও কমপেকশন করা হয়নি এবং মাটি এলোমেলোভাবে ফেলে রাখা হয়েছে।

**বৃষ্টি আসার অপেক্ষায় পিআইসি?**
স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ, পিআইসির দায়িত্বপ্রাপ্তরা বৃষ্টির অপেক্ষায় রয়েছেন, যাতে ‘ইমারজেন্সি ওয়ার্ক’ দেখিয়ে অতিরিক্ত বাজেট দাবি করা যায়। তাদের অভিযোগ, পরিকল্পিতভাবে ক্লোজারের কাজ শেষ করা হচ্ছে না, ফলে সময়মতো বাঁধের নির্মাণ শেষ না হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।

হাওরাঞ্চলের কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন, “সরকারের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বাঁধের কাজ শেষ হওয়ার কথা, অথচ এখনো অধিকাংশ বাঁধের মাটির কাজ সম্পন্ন হয়নি। এখন কোনদিন ঘাস লাগানো হবে? প্রতি বছর সময় বাড়িয়ে কাজ করা হয়, এবার অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আমাদের আবেদন, যেন নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই বাঁধ মেরামত সম্পন্ন হয়।”

**প্রশাসনের দাবি, ৮০% কাজ শেষ**
দিরাই উপজেলা বাঁধ মনিটরিং কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সঞ্জীব সরকার জানান, “উপজেলায় ৪৬টি পিআইসির মাটির কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে, ৫৬টিতে কাজ চলমান, এবং ৯টি পিআইসিতে ঘাস লাগানোর কাজ চলছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ৮০% কাজ শেষ হয়েছে। আমরা আশাবাদী, সরকারের নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই সকল বাঁধের কাজ সম্পন্ন হবে।”

তিনি আরও বলেন, সকল পিআইসি সভাপতি ও সম্পাদকদের সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে যে, সময়মতো কাজ শেষ না হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

**কৃষকদের শঙ্কা **
দিরাই উপজেলা কৃষকরা সরকারের নির্ধারিত ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বাঁধের কাজ সম্পন্ন হবে কিনা, তা নিয়ে সন্দিহান। কারণ প্রতি বছর বিভিন্ন অজুহাতে সময় বাড়ানো হয়, এবং পিআইসি পরিচালনায় দলীয় প্রভাবের অভিযোগও থাকে।।এবারও দলীয় প্রভাবে পিআইসি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠে, হয়তো একারণেই কাজের এই বেহাল দশা। তবে মাঠপর্যায়ের বাস্তবতা বলছে, এখনও অধিকাংশ বাঁধের মাটি কাটার কাজ শেষ হয়নি, ফলে বাঁধের কার্যকারিতা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে। স্থানীয়রা আশা করছেন, এবারের মতো যেন সময়মতো বাঁধ নির্মাণের কাজ সম্পন্ন হয় এবং কৃষকদের ফসল নিরাপদ থাকে।

ট্যাগ:
জনপ্রিয়

দিরাইয়ে বাঁধের কাজে ধীরগতি: সময়মতো কাজ শেষ নিয়ে শঙ্কা

প্রকাশের সময়: ০২:৩৯:১২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার করিমপুর, তাড়ল ও জগদল ইউনিয়নের বিভিন্ন ফসল রক্ষা বাঁধ পরিদর্শনে অনিয়মের সত্যতা পাওয়া গেছে। কয়েকটি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) কাজ নামেমাত্র শুরু করেছেন, আবার কিছু বাঁধে নিম্নমানের কাজ হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় কৃষকরা। সরকারের নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে বাঁধের কাজ শেষ হবে কিনা, তা নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে।

**পিআইসির কাজে অনিয়ম ও ধীরগতি**
জগদল ইউনিয়নের চাপতির হাওরের ৮ নম্বর পিআইসিতে মাটির কাজ শুরু হয়নি। ক্লোজারের নিচে সামান্য মাটির স্তর দেখা গেলেও সংশ্লিষ্টদের কাউকে সেখানে পাওয়া যায়নি। ৭ নম্বর পিআইসিতেও একই ধরনের অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এলোমেলোভাবে মাটি ফেলা হলেও কোনো কমপেকশন (মাটি চাপ দিয়ে বসানো) করা হয়নি, ফলে কাজের গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। তাছাড়া, এ পিআইসির কোথাও কোনো সাইনবোর্ডও দেখা যায়নি।

৭ নম্বর পিআইসির সভাপতির সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, সাইনবোর্ড দিরাইয়ে রয়েছে, পরে এনে স্থাপন করা হবে। কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ২৩ জানুয়ারি কাজ শুরু হয়েছে এবং ২৬ ফেব্রুয়ারির মধ্যে শেষ হবে। তবে মাটির কাজ এখনো শেষ না হওয়ায় এত কম সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা সম্ভব হবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।

হুরামন্দিরা হাওরের ৬২ নম্বর পিআইসিতে মাটির কাজ মোটামুটি ভালো হলেও কোথাও কমপেকশন করা হয়নি এবং মাটি এলোমেলোভাবে ফেলে রাখা হয়েছে।

**বৃষ্টি আসার অপেক্ষায় পিআইসি?**
স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ, পিআইসির দায়িত্বপ্রাপ্তরা বৃষ্টির অপেক্ষায় রয়েছেন, যাতে ‘ইমারজেন্সি ওয়ার্ক’ দেখিয়ে অতিরিক্ত বাজেট দাবি করা যায়। তাদের অভিযোগ, পরিকল্পিতভাবে ক্লোজারের কাজ শেষ করা হচ্ছে না, ফলে সময়মতো বাঁধের নির্মাণ শেষ না হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।

হাওরাঞ্চলের কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন, “সরকারের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বাঁধের কাজ শেষ হওয়ার কথা, অথচ এখনো অধিকাংশ বাঁধের মাটির কাজ সম্পন্ন হয়নি। এখন কোনদিন ঘাস লাগানো হবে? প্রতি বছর সময় বাড়িয়ে কাজ করা হয়, এবার অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আমাদের আবেদন, যেন নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই বাঁধ মেরামত সম্পন্ন হয়।”

**প্রশাসনের দাবি, ৮০% কাজ শেষ**
দিরাই উপজেলা বাঁধ মনিটরিং কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সঞ্জীব সরকার জানান, “উপজেলায় ৪৬টি পিআইসির মাটির কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে, ৫৬টিতে কাজ চলমান, এবং ৯টি পিআইসিতে ঘাস লাগানোর কাজ চলছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ৮০% কাজ শেষ হয়েছে। আমরা আশাবাদী, সরকারের নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই সকল বাঁধের কাজ সম্পন্ন হবে।”

তিনি আরও বলেন, সকল পিআইসি সভাপতি ও সম্পাদকদের সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে যে, সময়মতো কাজ শেষ না হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

**কৃষকদের শঙ্কা **
দিরাই উপজেলা কৃষকরা সরকারের নির্ধারিত ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বাঁধের কাজ সম্পন্ন হবে কিনা, তা নিয়ে সন্দিহান। কারণ প্রতি বছর বিভিন্ন অজুহাতে সময় বাড়ানো হয়, এবং পিআইসি পরিচালনায় দলীয় প্রভাবের অভিযোগও থাকে।।এবারও দলীয় প্রভাবে পিআইসি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠে, হয়তো একারণেই কাজের এই বেহাল দশা। তবে মাঠপর্যায়ের বাস্তবতা বলছে, এখনও অধিকাংশ বাঁধের মাটি কাটার কাজ শেষ হয়নি, ফলে বাঁধের কার্যকারিতা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে। স্থানীয়রা আশা করছেন, এবারের মতো যেন সময়মতো বাঁধ নির্মাণের কাজ সম্পন্ন হয় এবং কৃষকদের ফসল নিরাপদ থাকে।