তাহিরপুর উপজেলার বৃহৎ মাটিয়ান হাওরের অন্তর্ভুক্ত মহালিয়া, পালই, বৌন্না হাওরে এখনো পানি পুরোপুরি নামেনি। পানি না নামায় এই এলাকার কৃষকরা বোরো ধানের চারা রোপণ করতে পারছেন না। অন্যদিকে বাঁধ নির্মাণের জন্য শুকনো স্থান না থাকায় প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) মাটি সংগ্রহ করতে হিমশিম খাচ্ছে। ফলে ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ করতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না পিআইসি-র ১৪ জন সভাপতি।
এ অবস্থায় প্রকল্প এলাকায় উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছেন জেলা ও উপজেলা কাবিটা মনিটরিং ও বাস্তবায়ন কমিটির সদস্যরা।
জানা যায়, চলতি বছর তাহিরপুর উপজেলায় ১৭ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে মাটিয়ান হাওরে রয়েছে সাত হাজার হেক্টর জমি। হাওরের ফসল রক্ষায় ৩৬টি প্রকল্প অনুমোদিত হলেও মাটি সংকট এবং বাস্তব পরিস্থিতির কারণে ১৪টি প্রকল্পের সভাপতি কাজ করতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেছেন। ইতোমধ্যে তারা লিখিতভাবে এ বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানিয়েছেন।
মাটিয়ান হাওর প্রকল্পের পিআইসি সভাপতি গোলাম নূর বলেন, “প্রকল্পে যে বাজেট বরাদ্দ করা হয়েছে, বাস্তবে কাজ করতে গেলে তার দ্বিগুণ খরচ হবে। ফলে কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না।”
কৃষক ইমন জানান, “১৫ জানুয়ারি ইউএনও হাওরের পানি নিষ্কাশনের জন্য বাঁধ কেটেছিলেন, কিন্তু পানি এখনো যথেষ্ট পরিমাণে নামেনি। ফলে জমি বোরো চাষের জন্য প্রস্তুত নয়।”
তাহিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম বলেন, “হাওরের বেশিরভাগ জমিতে বোরো চারা রোপণ শেষ হয়েছে। তবে কিছু এলাকায় পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় বাঁধ নির্মাণ ও চারা রোপণে দেরি হচ্ছে। আমরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ করতে চেষ্টা করছি।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবুল হাসেম বলেন, “১৪টি পিআইসি প্রকল্প এলাকায় মাটি সংকট ও পানি নিষ্কাশনের জটিলতা রয়েছে। আমরা সরেজমিনে দেখে এসেছি এবং দ্রুত সমাধানের জন্য আলোচনা করছি। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে কাজ শেষ করার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।”
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, “বাঁধ নির্মাণের জন্য এলাকায় মাটি সংকট চরমে। কিছু এলাকায় স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। ভবিষ্যতে এই সমস্যা মোকাবিলায় আরও স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের প্রয়োজন।” পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা হাওরে মাটি সংকট নিরসনের জন্য বিকল্প পরিকল্পনা তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছেন। যথাসময়ে বাঁধ নির্মাণ সম্পন্ন না হলে হাওরের ফসল রক্ষার ঝুঁকি থেকে যাবে।