লন্ডন ০৩:৩০ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৬ মার্চ ২০২৫, ২ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শাল্লায় ফসলরক্ষা বাঁধ প্রকল্পে অনিয়ম: পিআইসি গঠনে দুর্নীতির অভিযোগ

শাল্লায় ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের ফসলরক্ষা বাঁধ প্রকল্প বাস্তবায়নে (পিআইসি) গঠনে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। কোথাও টাকা নিয়ে পিআইসি গঠনের অভিযোগ, কোথাও এক পরিবারের একাধিক সদস্যের অন্তর্ভুক্তি, আবার কোনো কোনো পিআইসিতে একই ব্যক্তির ভিন্ন পিতার নাম উল্লেখের মতো নানা অনিয়ম দেখা যাচ্ছে। এছাড়া, জমি না থাকা সত্ত্বেও অনেককে পিআইসির সভাপতি করা হয়েছে, এমনকি স্কুলের দপ্তরির নামও পিআইসিতে রয়েছে।

এছাড়া, বেশ কয়েকটি পিআইসিতে কুশিয়ারা নদীর পাড় কেটে বালুমিশ্রিত মাটি ফেলা হচ্ছে বাঁধে, যা স্থানীয় কৃষকদের ক্ষোভের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে শতাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে। এমনকি প্রয়োজন নেই এমন প্রকল্প গ্রহণ করার অভিযোগও উঠেছে। ফলে, উপজেলা কাবিটা স্কিম ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি এবং সদস্য সচিবের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।

দুর্নীতির অভিযোগে প্রকল্প বাতিল

ছায়ার হাওর উপ-প্রকল্পের আওতায় ৩৭ নম্বর পিআইসির সভাপতি প্রসেনজিৎ দাস অভিযোগ করে বলেন, প্রথমে তাকে প্রকল্প দেয়া হলেও পরবর্তীতে এসও মোটা অংকের টাকা নিয়ে অন্যজনকে তা দিয়ে দিয়েছেন। একই অভিযোগ ৪৪ নম্বর পিআইসির আবেদনকারী সভাপতি রুহুল আমিনেরও। তিনি জানান, প্রথমে তাকে প্রকল্পটি দেয়া হলেও পরে সেটি অন্যজনকে দিয়ে দেয়া হয়।

ভান্ডাবিল হাওর প্রকল্পেও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ৭৯ নম্বর পিআইসির সভাপতি বিমল দাস একজন টমটম চালক, যার ওই হাওরে কোনো জমি নেই। অথচ প্রকৃত কৃষকরা প্রতি বছর আবেদন করলেও তারা পিআইসি পাচ্ছেন না। স্থানীয় কৃষক দুরন্ত দাস জানান, তার জমি থাকা সত্ত্বেও তিনি পিআইসি পাননি, অথচ বাইরের লোকজনকে দেয়া হয়েছে।

সাংবাদিক ও প্রশাসনের যোগসাজশের অভিযোগ

স্থানীয়রা অভিযোগ করছেন, সাংবাদিকদেরও ১০টি পিআইসি দেয়া হয়েছে। কেউ নিজের নামে, কেউ ভাই, বাবা বা শ্যালকের নামে পিআইসি নিয়েছেন। জনপ্রতিনিধিদের সরাসরি অংশগ্রহণ না থাকায় প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও তাদের ঘনিষ্ঠরা পিআইসির সুবিধাভোগী হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

ধীরগতির বাঁধ নির্মাণ ও তদন্তের দাবি

সরেজমিনে দেখা গেছে, ৭৯ নম্বর পিআইসির বাঁধে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে মাটি ফেলা হয়েছে। কোথাও ৬ ইঞ্চি, কোথাও ১ ফুট। স্থানীয় কৃষকরা বলছেন, এই পিআইসি না দিলেও হাওরের ক্ষতি হতো না। এসব অনিয়মের তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে হাওর বাঁচাও আন্দোলন উপজেলা কমিটি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের শাখা কর্মকর্তা (এসও) রিপন আলী বলেন, ৭৯ নম্বর পিআইসির বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছেন এবং তদন্ত করবেন। তবে ৪৯ নম্বর প্রকল্পের দপ্তরিকে পিআইসিতে রাখা সংক্রান্ত বিষয়ে নীতিমালায় কোনো বাধা নেই বলে তিনি দাবি করেন।

এদিকে, নবাগত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পিয়াস চন্দ্র দাস জানান, তিনি সম্প্রতি দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন এবং পিআইসি গঠনের বিষয়টি তার দায়িত্ব গ্রহণের আগেই হয়েছে। তবে তিনি অভিযোগগুলো তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন বলে আশ্বাস দেন।

উল্লেখ্য, ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে ফসলরক্ষা বাঁধ সংস্কারের জন্য ৮৪ কিলোমিটার বাঁধ সংস্কারে সরকার প্রায় ২৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। এর বিপরীতে ১১৫টি পিআইসি গঠন করা হয়েছে, যার অধিকাংশেই অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।

ট্যাগ:
জনপ্রিয়

শাল্লায় ফসলরক্ষা বাঁধ প্রকল্পে অনিয়ম: পিআইসি গঠনে দুর্নীতির অভিযোগ

প্রকাশের সময়: ০৮:৩৬:২২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

শাল্লায় ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের ফসলরক্ষা বাঁধ প্রকল্প বাস্তবায়নে (পিআইসি) গঠনে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। কোথাও টাকা নিয়ে পিআইসি গঠনের অভিযোগ, কোথাও এক পরিবারের একাধিক সদস্যের অন্তর্ভুক্তি, আবার কোনো কোনো পিআইসিতে একই ব্যক্তির ভিন্ন পিতার নাম উল্লেখের মতো নানা অনিয়ম দেখা যাচ্ছে। এছাড়া, জমি না থাকা সত্ত্বেও অনেককে পিআইসির সভাপতি করা হয়েছে, এমনকি স্কুলের দপ্তরির নামও পিআইসিতে রয়েছে।

এছাড়া, বেশ কয়েকটি পিআইসিতে কুশিয়ারা নদীর পাড় কেটে বালুমিশ্রিত মাটি ফেলা হচ্ছে বাঁধে, যা স্থানীয় কৃষকদের ক্ষোভের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে শতাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে। এমনকি প্রয়োজন নেই এমন প্রকল্প গ্রহণ করার অভিযোগও উঠেছে। ফলে, উপজেলা কাবিটা স্কিম ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি এবং সদস্য সচিবের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।

দুর্নীতির অভিযোগে প্রকল্প বাতিল

ছায়ার হাওর উপ-প্রকল্পের আওতায় ৩৭ নম্বর পিআইসির সভাপতি প্রসেনজিৎ দাস অভিযোগ করে বলেন, প্রথমে তাকে প্রকল্প দেয়া হলেও পরবর্তীতে এসও মোটা অংকের টাকা নিয়ে অন্যজনকে তা দিয়ে দিয়েছেন। একই অভিযোগ ৪৪ নম্বর পিআইসির আবেদনকারী সভাপতি রুহুল আমিনেরও। তিনি জানান, প্রথমে তাকে প্রকল্পটি দেয়া হলেও পরে সেটি অন্যজনকে দিয়ে দেয়া হয়।

ভান্ডাবিল হাওর প্রকল্পেও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ৭৯ নম্বর পিআইসির সভাপতি বিমল দাস একজন টমটম চালক, যার ওই হাওরে কোনো জমি নেই। অথচ প্রকৃত কৃষকরা প্রতি বছর আবেদন করলেও তারা পিআইসি পাচ্ছেন না। স্থানীয় কৃষক দুরন্ত দাস জানান, তার জমি থাকা সত্ত্বেও তিনি পিআইসি পাননি, অথচ বাইরের লোকজনকে দেয়া হয়েছে।

সাংবাদিক ও প্রশাসনের যোগসাজশের অভিযোগ

স্থানীয়রা অভিযোগ করছেন, সাংবাদিকদেরও ১০টি পিআইসি দেয়া হয়েছে। কেউ নিজের নামে, কেউ ভাই, বাবা বা শ্যালকের নামে পিআইসি নিয়েছেন। জনপ্রতিনিধিদের সরাসরি অংশগ্রহণ না থাকায় প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও তাদের ঘনিষ্ঠরা পিআইসির সুবিধাভোগী হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

ধীরগতির বাঁধ নির্মাণ ও তদন্তের দাবি

সরেজমিনে দেখা গেছে, ৭৯ নম্বর পিআইসির বাঁধে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে মাটি ফেলা হয়েছে। কোথাও ৬ ইঞ্চি, কোথাও ১ ফুট। স্থানীয় কৃষকরা বলছেন, এই পিআইসি না দিলেও হাওরের ক্ষতি হতো না। এসব অনিয়মের তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে হাওর বাঁচাও আন্দোলন উপজেলা কমিটি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের শাখা কর্মকর্তা (এসও) রিপন আলী বলেন, ৭৯ নম্বর পিআইসির বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছেন এবং তদন্ত করবেন। তবে ৪৯ নম্বর প্রকল্পের দপ্তরিকে পিআইসিতে রাখা সংক্রান্ত বিষয়ে নীতিমালায় কোনো বাধা নেই বলে তিনি দাবি করেন।

এদিকে, নবাগত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পিয়াস চন্দ্র দাস জানান, তিনি সম্প্রতি দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন এবং পিআইসি গঠনের বিষয়টি তার দায়িত্ব গ্রহণের আগেই হয়েছে। তবে তিনি অভিযোগগুলো তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন বলে আশ্বাস দেন।

উল্লেখ্য, ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে ফসলরক্ষা বাঁধ সংস্কারের জন্য ৮৪ কিলোমিটার বাঁধ সংস্কারে সরকার প্রায় ২৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। এর বিপরীতে ১১৫টি পিআইসি গঠন করা হয়েছে, যার অধিকাংশেই অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।