সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার শিমুলবাক ইউনিয়নের জ্বীবদাড়া বাজারের দক্ষিণের হাওরে তীব্র সেচ সংকট দেখা দিয়েছে। পানির অভাবে ফসলি জমি ফেটে গেছে, বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। জলমহালগুলো ভরাট হয়ে যাওয়ায় হাওরের পানি শুকিয়ে গেছে, ফলে শত শত হেক্টর বোরো ফসল হুমকির মুখে পড়েছে।
স্থানীয়রা জানান, হাওরের জলমহালগুলো ভরাট হয়ে যাওয়ায় সেচ সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। দ্রুত খনন না করা হলে ভবিষ্যতে এসব জমি অনাবাদি হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, শিমুলবাক ইউনিয়নের উকারগাঁও মৌজার সুরাইয়া বিল জলমহালটি ১৩.৩০ একর জায়গাজুড়ে বিস্তৃত। এটি ২০২৩ সালের ৫ সেপ্টেম্বর থেকে ১৪৩০-১৪৩২ বাংলা সনের জন্য জ্বীবদাড়া আদর্শ মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেডের কাছে ইজারা দেওয়া হয়।
রবিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পুরো হাওরজুড়ে বিস্তৃত সবুজ ধানের মাঠ। তবে জমিগুলোতে মারাত্মক পানির সংকট রয়েছে। সুরাইয়া বিল জলমহালটি পুরোপুরি শুকিয়ে গেছে, ফলে বিল ও জমির মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। কৃষকরা গত কয়েকদিনে জমির সামান্য পানি ব্যবহার করে ফেলেছেন, নতুন করে কোথাও পানি নেই।
স্থানীয় কৃষক মো. এনামুল হক বলেন, “আমার অনেক জমি রয়েছে, অনেক খরচ করে চাষ করেছি। কিন্তু এখন সেচ সংকটের কারণে ফসল বাঁচানো কঠিন হয়ে পড়েছে। সুরাইয়া বিলটি খনন করা না হলে কৃষিজমি রক্ষা করা সম্ভব হবে না।”
একই মত প্রকাশ করে কৃষক সোহেল মিয়া বলেন, “জলমহালটি ভরাট হয়ে জমি ও বিল সমান হয়ে গেছে। এই বছর বৃষ্টি না হলে ফসল ঘরে তোলা অসম্ভব হয়ে যাবে। যদি দ্রুত খনন করা হয়, তাহলে কৃষকরা ধান উৎপাদন করতে পারবে, না হলে ভবিষ্যতে এই হাওরের জমি অনাবাদি হয়ে যাবে।”
জ্বীবদাড়া আদর্শ মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি সাজিরুল ইসলাম বলেন, “প্রতি বছরই আমরা নিজেদের অর্থায়নে কিছু জায়গা খনন করি, কিন্তু এটি যথেষ্ট নয়। সরকার যদি বড় পরিসরে জলমহাল খনন করে, তাহলে কৃষকদের পাশাপাশি আমাদেরও উপকার হবে। এতে সরকারের রাজস্বও বাড়বে এবং বিলের মাছের উৎপাদনও বাড়বে।”
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আহসান হাবিব জানান, “এই হাওরে প্রচুর পরিমাণে বোরো জমি রয়েছে, কিন্তু সেচ সংকটের কারণে কৃষকদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। আমরা উপজেলা জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটিকে বিষয়টি অবহিত করব এবং বিএডিসিকেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলব।”
শান্তিগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ও জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি সুকান্ত সাহা বলেন, “জলমহালটি ভরাট হয়ে যাওয়ায় এই সমস্যা দেখা দিয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কেউ লিখিতভাবে আমাদের কাছে আবেদন করেননি। যদি স্থানীয়রা আবেদন করেন, তাহলে যাচাই-বাছাই করে খননের অনুমতি দেওয়া হবে বা প্রকল্পের মাধ্যমে খনন করা হবে। কৃষি বাঁচাতে সরকার সর্বদা আন্তরিক।”