লন্ডন ০৮:২০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২১ মে ২০২৫, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশে স্টারলিংক: ইন্টারনেট বিপ্লবে নতুন দিগন্ত

নন-জিওস্টেশনারি স্যাটেলাইট অরবিট (এনজিএসও) নেটওয়ার্কের মাধ্যমে উচ্চগতির ও কম-বিলম্বিত ইন্টারনেট সেবা এনে বাংলাদেশে এক নতুন প্রযুক্তিগত বিপ্লব ঘটাতে পারে স্টারলিংক। প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এর ফলে দেশের শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, অর্থনীতি এবং সামাজিক অন্তর্ভুক্তির সুযোগ বাড়বে।

গত বৃহস্পতিবার স্পেসএক্স, টেসলা ও এক্স-এর মালিক ইলন মাস্কের সঙ্গে ভিডিও আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আলোচনায় বাংলাদেশের জন্য স্টারলিংক স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সংযোগের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হয়। পরে এক্স হ্যান্ডেলে দেওয়া এক পোস্টে ইলন মাস্ক এই প্রকল্পটি নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

স্টারলিংকের সম্ভাব্য ইন্টারনেট গতি ও প্রভাব
বিশেষজ্ঞদের মতে, স্টারলিংকের ইন্টারনেটের ডাউনলোড গতি ২৫ থেকে ২২০ এমবিপিএস পর্যন্ত হতে পারে, যেখানে বেশিরভাগ ব্যবহারকারী ১০০ এমবিপিএসের বেশি গতি পাবেন। আপলোড গতি ৫ থেকে ২০ এমবিপিএসের মধ্যে থাকবে।

টেলিকম ও প্রযুক্তি বিশ্লেষক মোস্তাফা মাহমুদ হোসাইন বার্তা সংস্থা বাসসকে বলেন, “বাংলাদেশ ডিজিটাল অবকাঠামো আধুনিকায়নের জন্য এনজিএসও স্যাটেলাইট পরিষেবা গ্রহণের দ্বারপ্রান্তে।”

তিনি আরও বলেন, “প্রতিযোগিতা ও উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করতে নমনীয় নীতিমালার মাধ্যমে দেশজুড়ে সংযোগ বৃদ্ধির সুযোগ তৈরি হবে, যা স্বাস্থ্য, শিক্ষা, ব্যবসা ও সমাজ উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।”

বাংলাদেশে স্টারলিংকের অংশীদারত্ব ও বিনিয়োগ পরিকল্পনা
এদিকে, মোবাইল অপারেটর বাংলালিংকের মূল প্রতিষ্ঠান ভিওন লিমিটেড এবং দুবাইভিত্তিক একটি টেলিযোগাযোগ কোম্পানি স্টারলিংকের সঙ্গে অংশীদারত্বে বাংলাদেশে স্যাটেলাইটভিত্তিক মোবাইল পরিষেবা চালুর সম্ভাবনা পরীক্ষা করছে। এর লক্ষ্য হলো এমন এলাকায় সংযোগ বাড়ানো, যেখানে প্রচলিত টেরেস্ট্রিয়াল নেটওয়ার্ক স্থাপন করা সম্ভব নয়।

শিল্পসংশ্লিষ্টদের মতে, স্পেনের বার্সেলোনায় আসন্ন মোবাইল ওয়ার্ল্ড কংগ্রেসে বাংলালিংক ও স্পেসএক্সের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হতে পারে।

স্টারলিংকের সেবার ব্যয় ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
টেলিকম বিশেষজ্ঞ লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মোহাম্মদ জুলফিকার বলেন, “বিশ্বের বহু দেশ ইতোমধ্যে স্টারলিংকের সেবা গ্রহণ করেছে। এটি বাংলাদেশের জন্যও ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে। তবে প্রশ্ন থেকে যায়—এই সেবা পেতে গ্রাহকদের কত টাকা খরচ করতে হবে?”

স্টারলিংকের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, পরিষেবা ব্যবহারের জন্য গ্রাহকদের ৩৪৯ থেকে ৫৯৯ মার্কিন ডলারের মধ্যে খরচ করে স্টারলিংক কিট (অ্যানটেনা, রাউটার, ক্যাবল ও পাওয়ার সাপ্লাই) কিনতে হবে। মাসিক ফি আবাসিক গ্রাহকদের জন্য ১২০ ডলার এবং করপোরেট গ্রাহকদের জন্য দ্বিগুণের বেশি হতে পারে। তবে, অঞ্চলভেদে মূল্য পরিবর্তিত হতে পারে।

বাংলাদেশে স্টারলিংকের সম্ভাবনা
২০২৩ সালের জুলাইয়ে স্টারলিংক পরীক্ষামূলকভাবে বাংলাদেশে তাদের প্রযুক্তি নিয়ে আসে। ২০২৪ সালের অক্টোবরে স্পেসএক্সের একটি প্রতিনিধি দল ঢাকায় এসে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) এবং বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সঙ্গে বৈঠক করে। বিটিআরসি তখনই ‘নন-জিওস্টেশনারি অরবিট (এনজিএসও) স্যাটেলাইট সার্ভিস অপারেটর’ নির্দেশিকার খসড়া তৈরি করে।

অধ্যাপক ড. ইউনূস ও ইলন মাস্কের আলোচনায় বিশেষভাবে বাংলাদেশের তরুণ উদ্যোক্তা, গ্রামীণ ও সুবিধাবঞ্চিত নারীদের জন্য স্টারলিংকের সম্ভাব্য ইতিবাচক পরিবর্তনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।

বিশ্লেষকদের মতে, স্টারলিংক বাংলাদেশে ইন্টারনেট সংযোগ সম্প্রসারণের একটি কার্যকর সমাধান হতে পারে, বিশেষ করে দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের জন্য। যদিও ব্যয়ের বিষয়টি এখনও চূড়ান্ত হয়নি, তবে এটি বাংলাদেশের ডিজিটাল ভবিষ্যৎকে এগিয়ে নিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

ট্যাগ:

বাংলাদেশে স্টারলিংক: ইন্টারনেট বিপ্লবে নতুন দিগন্ত

প্রকাশের সময়: ০৬:৩৮:১২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

নন-জিওস্টেশনারি স্যাটেলাইট অরবিট (এনজিএসও) নেটওয়ার্কের মাধ্যমে উচ্চগতির ও কম-বিলম্বিত ইন্টারনেট সেবা এনে বাংলাদেশে এক নতুন প্রযুক্তিগত বিপ্লব ঘটাতে পারে স্টারলিংক। প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এর ফলে দেশের শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, অর্থনীতি এবং সামাজিক অন্তর্ভুক্তির সুযোগ বাড়বে।

গত বৃহস্পতিবার স্পেসএক্স, টেসলা ও এক্স-এর মালিক ইলন মাস্কের সঙ্গে ভিডিও আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আলোচনায় বাংলাদেশের জন্য স্টারলিংক স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সংযোগের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হয়। পরে এক্স হ্যান্ডেলে দেওয়া এক পোস্টে ইলন মাস্ক এই প্রকল্পটি নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

স্টারলিংকের সম্ভাব্য ইন্টারনেট গতি ও প্রভাব
বিশেষজ্ঞদের মতে, স্টারলিংকের ইন্টারনেটের ডাউনলোড গতি ২৫ থেকে ২২০ এমবিপিএস পর্যন্ত হতে পারে, যেখানে বেশিরভাগ ব্যবহারকারী ১০০ এমবিপিএসের বেশি গতি পাবেন। আপলোড গতি ৫ থেকে ২০ এমবিপিএসের মধ্যে থাকবে।

টেলিকম ও প্রযুক্তি বিশ্লেষক মোস্তাফা মাহমুদ হোসাইন বার্তা সংস্থা বাসসকে বলেন, “বাংলাদেশ ডিজিটাল অবকাঠামো আধুনিকায়নের জন্য এনজিএসও স্যাটেলাইট পরিষেবা গ্রহণের দ্বারপ্রান্তে।”

তিনি আরও বলেন, “প্রতিযোগিতা ও উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করতে নমনীয় নীতিমালার মাধ্যমে দেশজুড়ে সংযোগ বৃদ্ধির সুযোগ তৈরি হবে, যা স্বাস্থ্য, শিক্ষা, ব্যবসা ও সমাজ উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।”

বাংলাদেশে স্টারলিংকের অংশীদারত্ব ও বিনিয়োগ পরিকল্পনা
এদিকে, মোবাইল অপারেটর বাংলালিংকের মূল প্রতিষ্ঠান ভিওন লিমিটেড এবং দুবাইভিত্তিক একটি টেলিযোগাযোগ কোম্পানি স্টারলিংকের সঙ্গে অংশীদারত্বে বাংলাদেশে স্যাটেলাইটভিত্তিক মোবাইল পরিষেবা চালুর সম্ভাবনা পরীক্ষা করছে। এর লক্ষ্য হলো এমন এলাকায় সংযোগ বাড়ানো, যেখানে প্রচলিত টেরেস্ট্রিয়াল নেটওয়ার্ক স্থাপন করা সম্ভব নয়।

শিল্পসংশ্লিষ্টদের মতে, স্পেনের বার্সেলোনায় আসন্ন মোবাইল ওয়ার্ল্ড কংগ্রেসে বাংলালিংক ও স্পেসএক্সের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হতে পারে।

স্টারলিংকের সেবার ব্যয় ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
টেলিকম বিশেষজ্ঞ লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মোহাম্মদ জুলফিকার বলেন, “বিশ্বের বহু দেশ ইতোমধ্যে স্টারলিংকের সেবা গ্রহণ করেছে। এটি বাংলাদেশের জন্যও ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে। তবে প্রশ্ন থেকে যায়—এই সেবা পেতে গ্রাহকদের কত টাকা খরচ করতে হবে?”

স্টারলিংকের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, পরিষেবা ব্যবহারের জন্য গ্রাহকদের ৩৪৯ থেকে ৫৯৯ মার্কিন ডলারের মধ্যে খরচ করে স্টারলিংক কিট (অ্যানটেনা, রাউটার, ক্যাবল ও পাওয়ার সাপ্লাই) কিনতে হবে। মাসিক ফি আবাসিক গ্রাহকদের জন্য ১২০ ডলার এবং করপোরেট গ্রাহকদের জন্য দ্বিগুণের বেশি হতে পারে। তবে, অঞ্চলভেদে মূল্য পরিবর্তিত হতে পারে।

বাংলাদেশে স্টারলিংকের সম্ভাবনা
২০২৩ সালের জুলাইয়ে স্টারলিংক পরীক্ষামূলকভাবে বাংলাদেশে তাদের প্রযুক্তি নিয়ে আসে। ২০২৪ সালের অক্টোবরে স্পেসএক্সের একটি প্রতিনিধি দল ঢাকায় এসে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) এবং বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সঙ্গে বৈঠক করে। বিটিআরসি তখনই ‘নন-জিওস্টেশনারি অরবিট (এনজিএসও) স্যাটেলাইট সার্ভিস অপারেটর’ নির্দেশিকার খসড়া তৈরি করে।

অধ্যাপক ড. ইউনূস ও ইলন মাস্কের আলোচনায় বিশেষভাবে বাংলাদেশের তরুণ উদ্যোক্তা, গ্রামীণ ও সুবিধাবঞ্চিত নারীদের জন্য স্টারলিংকের সম্ভাব্য ইতিবাচক পরিবর্তনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।

বিশ্লেষকদের মতে, স্টারলিংক বাংলাদেশে ইন্টারনেট সংযোগ সম্প্রসারণের একটি কার্যকর সমাধান হতে পারে, বিশেষ করে দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের জন্য। যদিও ব্যয়ের বিষয়টি এখনও চূড়ান্ত হয়নি, তবে এটি বাংলাদেশের ডিজিটাল ভবিষ্যৎকে এগিয়ে নিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।