রমজান মাস ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাস, যা আত্মশুদ্ধি, সংযম ও তাকওয়া অর্জনের মাধ্যমে মুসলমানদের আত্মিক পরিশুদ্ধি সাধনের সুযোগ করে দেয়।
রমজান ও রোজার সংজ্ঞা
‘রোজা’ শব্দটি ফারসি থেকে উদ্ভূত, যা বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ভারতে বহুল প্রচলিত। তবে আরবি ভাষায় একে বলা হয় ‘সিয়াম’, যার আভিধানিক অর্থ হলো ‘বিরত থাকা’। ইসলামের পরিভাষায় সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে পানাহার ও ইন্দ্রিয়তৃপ্তি থেকে বিরত থাকার নাম সিয়াম বা রোজা।
রমজান মাস ইসলামী বর্ষপঞ্জির নবম মাস, যা বিশ্ব মুসলিমের জন্য এক আত্মশুদ্ধির মাস। ‘রমজান’ শব্দটি এসেছে আরবি ‘রমজ’ থেকে, যার অর্থ ‘পুড়িয়ে ফেলা’। এই এক মাসের রোজা মানুষের যাবতীয় পাপ ও কুপ্রবৃত্তি দগ্ধ করে তাকে সংযমী ও পুণ্যবান করে তোলে।
রোজার বিধান ও তাকওয়া অর্জন
শরিয়তের বিধান অনুযায়ী, প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ ও সক্ষম প্রতিটি মুসলমানের জন্য রোজা পালন করা ফরজ। তবে শিশুরা, অসুস্থ ব্যক্তিরা, ভ্রমণরতরা এবং নারীদের বিশেষ অবস্থা থাকলে তারা রোজা রাখতে বাধ্য নন।
পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে—
“হে মুমিনগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের ওপর, যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার।” (সুরা বাকারা ১৮৩)
তাকওয়া হলো আল্লাহভীতি ও নৈতিক শুদ্ধতার সমষ্টি। এর অর্থ হলো, আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য সকল পাপকাজ থেকে বিরত থাকা এবং জীবনকে কোরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী পরিচালিত করা।
রমজান ও কোরআন নাজিলের মাহাত্ম্য
রমজান মাসেই ইসলামের পবিত্র গ্রন্থ আল-কোরআন নাজিল হয়েছে। এ প্রসঙ্গে কোরআনে বলা হয়েছে—
“রমজান মাস হলো সেই মাস, যে মাসে কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে মানুষের জন্য পথপ্রদর্শক, সত্য পথের উজ্জ্বল নিদর্শন ও সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী।” (সুরা বাকারা ১৮৫)
হাদিসের আলোকে রোজার ফজিলত
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন—
“যে ব্যক্তি কোনো কারণ ছাড়া রমজানের একটি রোজা ভেঙে ফেলে, তার সারা জীবনের রোজা রাখার মাধ্যমেও সেই এক দিনের রোজার ক্ষতিপূরণ হবে না।” (তিরমিজি)
এছাড়াও হাদিসে রমজানের তিনটি ভাগ বর্ণিত হয়েছে—
১. প্রথম দশক রহমতের (আল্লাহর দয়া লাভের) দশক।
2. দ্বিতীয় দশক মাগফিরাতের (পাপ মোচনের) দশক।
3. তৃতীয় দশক নাজাতের (জাহান্নাম থেকে মুক্তির) দশক।
লাইলাতুল কদর: হাজার মাসের শ্রেষ্ঠ রাত
রমজানের শেষ দশকে লাইলাতুল কদর বা ‘কদর রজনি’ বিদ্যমান, যা এক হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও বেশি ফজিলতপূর্ণ। কোরআনে উল্লেখ আছে—
“শবে কদর হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।” (সুরা কদর ৩)
হাদিসে এসেছে, এই রাতে ফেরেশতারা দুনিয়ায় অবতরণ করেন এবং সৎকর্মশীল বান্দাদের জন্য রহমতের দোয়া করেন।
রোজার শারীরিক ও আত্মিক উপকারিতা
রোজা কেবল ধর্মীয় ইবাদত নয়, এটি মানুষের আত্মশুদ্ধি, সংযম ও ধৈর্যচর্চার এক মহাসুযোগ। রোজার মাধ্যমে—
✅ শরীর ও মন পবিত্র হয়।
✅ অপবিত্রতা ও পাপরাশি দগ্ধ হয়ে যায়।
✅ আত্মসংযম ও কুপ্রবৃত্তি নিয়ন্ত্রণ সহজ হয়।
✅ শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে সুরক্ষা পাওয়া যায়।
✅ কিয়ামতের দিন রোজাদারের জন্য ‘রাইয়ান’ নামক বিশেষ দরজা উন্মুক্ত থাকবে, যা দিয়ে শুধু রোজাদাররাই প্রবেশ করবে। (সহিহ বুখারি)