সুনামগঞ্জে কাবিটা স্কিম বাস্তবায়ন ও মনিটরিং কমিটির ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ শেষের দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে হাওর বাঁচাও আন্দোলন। এ বিষয়ে বুধবার (১২ মার্চ) সুনামগঞ্জ শহরের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন হাওর বাঁচাও আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি অধ্যাপক চিত্তরঞ্জন তালুকদার এবং সঞ্চালনা করেন সুনামগঞ্জ জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. ওবায়দুল হক মিলন। লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জেলা হাওর বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি ইয়াকুব বখত বাহালুল।
সংবাদ সম্মেলনে উত্থাপিত অভিযোগ ও পর্যবেক্ষণ
হাওর বাঁচাও আন্দোলনের নেতারা জানান, চলতি বোরো মৌসুমে হাওরের ৫৮৭ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণের জন্য ১২৭ কোটি টাকা বরাদ্দে ৬৮৬টি প্রকল্প অনুমোদিত হয়। নীতিমালা অনুযায়ী, ১৫ ডিসেম্বর বাঁধের কাজ শুরু হয়ে ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বাস্তবে মার্চ মাসেও অনেক বাঁধের কাজ শুরু হয়নি।
সংগঠনের দাবি,
✅ বাঁধের কাজে ঢিলেমি ও অনিয়ম হয়েছে – যথাসময়ে কাজ শুরু না করায় আগাম বন্যায় বাঁধ ভেঙে পড়ার শঙ্কা রয়েছে।
✅ স্থানীয় রাজনৈতিক ও প্রভাবশালীদের ইচ্ছেমতো প্রকল্প বাস্তবায়ন – প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) গঠনে মাঠপর্যায়ের গণশুনানি হয়নি, বরং প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কর্মকর্তাদের যোগসাজশে প্রকল্প বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
✅ বাঁধ নির্মাণে নিম্নমানের কাজ – মাটির কাজ সঠিকভাবে না করে পুরাতন বাঁধ কেটে শুধু মাটি প্রলেপ দেওয়া হয়েছে, যেখানে দুর্বাঘাস ও সুরক্ষামূলক কাজ করা হয়নি।
✅ বিভিন্ন এলাকায় অনিয়ম ও অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহণ – শান্তিগঞ্জ, জামখলা, মান্নারগাঁও, দোয়ারাবাজার, বিশ্বম্ভরপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় অপ্রয়োজনীয় বাঁধ নির্মাণে সরকারি অর্থ অপচয় করা হয়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী বাঁধ নির্মাণের প্রকৃত অবস্থা
সংগঠনের পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে—
১০ মার্চ পর্যন্ত ৭৫-৮০% কাজ সম্পন্ন হয়েছে, যা সরকার ঘোষিত “কাজ শেষ” দাবির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বাঁধ এখনো ঝুঁকিপূর্ণ।
পিআইসি নং ৩১, ৩২, ৪১, ৪২, ৪৩, ৫৯, ৬০, ৬১ নং বাঁধগুলোর কাজ অত্যন্ত নিম্নমানের।
সাংহাই হাওরের নমেনখালি ক্লোজারে ১০ মার্চ কাজ শুরু হলেও ৯ মার্চ সরকারিভাবে “শেষ হয়েছে” ঘোষণা দেওয়া হয়।
দোয়ারাবাজারের ৪৬ নং পিআইসিতে ১৭.৭৬ লাখ টাকার অপ্রয়োজনীয় বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে, যেখানে ৭ হাজার টাকারও ধান উৎপাদন হয় না।
জগন্নাথপুর, তাহিরপুর, মধ্যনগর, ছাতক ও দিরাই উপজেলার অনেক বাঁধে এখনও কাজ অসম্পূর্ণ।
সংগঠনের দাবি ও পরবর্তী পদক্ষেপ
✅ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যারা কাজ শেষ করেনি, তাদের বিল পরিশোধ না করা।
✅ যারা শতভাগ কাজ সম্পন্ন করেছে, তাদের ন্যায্য বিল প্রদান।
✅ হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ দ্রুত শেষ করা।
✅ কাবিটা স্কিম বাস্তবায়ন ও মনিটরিং কমিটিকে দায় নিতে হবে।
✅ প্রয়োজনে আদালতে যাওয়ার ঘোষণা।
সংবাদ সম্মেলন শেষে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।